মঙ্গলবার , ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৩১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

গুমে থাকার যে বর্ণনা দিলেন সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আযমী

Paris
সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৪ ৮:০৮ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

দীর্ঘ আট বছর গুম থাকার বর্ণনা দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির প্রয়াত গোলাম আজমের ছেলে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী।

মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল ব্রিফিং-এ বলেন, তার ওপর অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হয়েছে।

২০১৬ সালের ২৩শে অগাস্ট নিখোঁজ হন মি. আযমী। সেই দিনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ওইদিন তিনি তার অসুস্থ মায়ের সাথে ভাত খেতে বসেছিলেন।

“সেদিন সরকারের গুণ্ডাবাহিনী আমার বাসায় আসে। তাদের মাঝে যাকে আমার অফিসার বলে মনে হয়েছে, সে আমার সাথে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করেছে। আমাকে তুই করে কথা বলেছে। চরম দুর্ব্যবহার করেছে,” বলছিলেন তিনি।

মি. আযমী তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা তার জবাব দেয়নি। এমনকি, “মামলা বা ওয়ারেন্ট ছাড়া আমায় গ্রেফতার করতে পারেন না” বলার পরও তারা নির্বিকার ছিল।

“তারা খালি বলেছে, (হাতকড়া পড়াতে) হাত দেন। একপর্যায়ে আমি আমার মানসম্মান বাঁচাতে হাত দিয়েছি। নয়তো আমার গায়ে হাত উঠিয়ে দিত। এটাই বাকি ছিল,” তিনি বলেন।

এরপর তারা তার চোখ বেঁধে একটি মাইক্রোবাসে ওঠায়। তারপর একটি মুখোশ পরায়।

তারপর দেড় ঘণ্টার মতো পার হয়ে গাড়িটি একটা জায়গায় থামে এবং তারপর তাকে একটা রুমে নিয়ে চোখ হাত খুলে দেওয়া হয়, বলছিলেন তিনি।

“ওরা একটা পায়জামা-লুঙ্গি দিল। কাপড় পাল্টে দিতে বললো। আমার বাবার স্যান্ডেল আমার পায়ে ছিল। স্যান্ডেল নিতে গেলে সেটা আমি দেইনি। ওটা আমার বাবার স্মৃতি।”

সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী

প্রতিদিন নতুন কায়দায় নির্যাতন চালানো হতো

তিনি জানান, এরপর প্রতিদিন নতুন কায়দায় তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে।

মি. আযমী ভেবেছিলেন, তাকে ক্রসফায়ারে মেরে ফেলা হবে। সেজন্য তিনি গাড়িতে বসে বারবার জিজ্ঞেস করেছিলেন যে তাকে ক্রসফায়ারের জন্য নিচ্ছে কিনা। “আমার পাশের একজন বললো, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আপনার সাথে কথা বলবে।”

প্রথমদিন ভোররাতের দিকে তিনে ওজু করে এসে তাহাজ্জুত নামাজ, ফজর নামাজ পড়লাম। তাকে যে ঘরে রাখা হয়েছিলো, সেখান থেকে টয়লেটে যাওয়ার দূরত্ব ছিল ৫০ কদম। তিনি বলেন, “আমার দু’হাত বেঁধে, চোখ বেঁধে, মুখোশ পরিয়ে নিয়ে যেত।”

“টয়লেটের ভেতরে গিয়ে চোখ-হাত খুলে দিত। বাইরে থেকে স্টিলের দরজা বন্ধ করে তালা মেরে রাখতো। কাজ শেষ হলে তারা আবার দরজা খুলে দিতো। তারপর চোখ-হাত বেঁধে নিয়ে আবার রুমে নিয়ে আসতো।”

সেদিনের স্মৃতি থেকে তিনি বলেন যে নামাজ পড়ে তিনি সারারাত কান্নাকাটি করেছেন।

“কারও পায়ের আওয়াজ শুনলেই মনে হত, এই বুঝি আমাকে ক্রসফায়ারে নিয়ে যাচ্ছে। আমি নামাজ পড়ে কাঁদতে কাঁদতে আল্লাহকে বললাম, এই নামাজ যেন আমার শেষ না নামাজ হয়…আমার লাশ যেন কুকুর বিড়াল না খায়।”

এরপর একটা পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারান ও কতক্ষণ পরে জ্ঞান ফিরেছে, তা জানেন না। যখন জ্ঞান ফিরেছে, তখন তাকে বলা হয় যে তার প্রেশার বেড়ে গিয়েছিলো।

তিনি জানান, তাকে যেখানে রাখা হয়, সেখানে দিন-রাত বোঝা যেত না।

“আমি গেল আট বছর সেখানে বন্দি থাকা অবস্থায় পৃথিবীর কোনো আলো দেখিনি, আকাশ দেখিনি সূর্য দেখিনি। মাঝে মাঝে তারা চোখ এমন ভাবে বাঁধতো, মনে হচ্ছিল আমার চোখের মনি ফেটে যাবে। হাতকড়া পরা থাকতে থাকতে হাতে ঘা হয়ে যেত। আট বছর আমি এক অন্ধকার ঘরে ছিলাম, পৃথিবীর কিছুই আমি দেখতে পাইনি এ সময়।”

এখনো নিঁখোজ অনেকের পরিবার অপেক্ষায় আছেন

গত পাঁচই অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের দুই দিন পর বাড়ি ফিরেন মি. আযমী।

ফিরে এসে তিনি জানতে পেরেছেন, তাকে তুলে নেওয়ার পর “তারা” তার স্ত্রীর সাথে দুর্ব্যবহার করেছে এবং তাকেও তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো। তিনি আরও দাবী করেছেন যে “তারা আমার বাসার যুবতী কাজের মেয়ের গায়ে হাত তুলেছে।”

যারা তাকে এবং অন্যদেরকে গুম করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দাবি করেন তিনি।

তিনি তার বক্তব্যের শুরুতেই “২৯ হাজার ৭৯৪ ঘণ্টার নির্মম জীবন থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য” বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সেইসাথে, সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকেও ধন্যবাদ দেন তিনি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশকে ৫০ বছর দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে আহ্বান জানান, যাতে তারা এই সরকারকের প্রতি সর্বাত্মক সহায়তা অব্যাহত রাখে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

সর্বশেষ - জাতীয়