বৃহস্পতিবার , ২০ আগস্ট ২০২০ | ১৯শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

গতিপথ পাল্টাচ্ছে তিস্তা, আতঙ্কে নদীপারের মানুষ

Paris
আগস্ট ২০, ২০২০ ১১:০১ পূর্বাহ্ণ

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের শংকরদহ গ্রাম। এই গ্রামেই বাড়ি ছিল জয়নাল আবেদীনের (৬৫)। তিস্তার ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে তিন মাস আগে চর ইচলী গ্রামে মাটি কেটে বাড়ি করেন। এতে তার খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা।

জয়নালের আশা ছিল হয়তো কয়েক বছর একটু আরামে থাকবেন, নদীতো অনেক দূরে। কিন্তু তিন মাসের মাথায় আবারও ভাঙতে হলো বাড়ি। রাস্তার ওপর আপাতত ঘরটা রেখেছেন তিনি।

একই গ্রামের রেজাউল (৪৫) এক বছর আগে চর ইচলী গ্রামে বাড়ি করেন। খরচ হয় ৩০ হাজার টাকা। এক বছরের মাথায় তাকেও ভাঙতে হলো বাড়িঘর। তাঁরও ঠাঁই এখন রাস্তায়।

শংকরদহ বাঁধটি ভাঙার পর গত এক সপ্তাহে চর ইচলী গ্রামের ২০০ পরিবারের বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে একটি মসজিদ ও মাদ্রাসা তিস্তায় বিলীন হয়েছে। শংকরদহ গ্রাম বিলীনের পর এবার তিস্তার ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করেছে চর ইচলী গ্রামে।

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় গতিপথ পরিবর্তন করেছে তিস্তা। নদীটির গতিপথ পরিবর্তনে জয়নাল, রেজাউলের মতো ভিটেমাটি হারিয়েছে অনেকে। সাম্প্রতিক বন্যায় শেখ হাসিনা গঙ্গাচড়া সেতুর উজানে ভিন্ন দুটি চ্যানেল দিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহিত হওয়ায় নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে।

এরইমধ্যে লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের শংকরদহ গ্রাম বিলীন হওয়ায় প্রায় ৪০০ পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব  হয়েছে। ইচলী গ্রামও এখন বিরানভূমি। হুমকিতে রয়েছে রংপুর-কাকিনা সড়ক।

সাম্প্রতিক বন্যায় তিস্তার ভাঙনে শংকরদহ বাঁধ ভেঙে সিরাজুল মার্কেটের পাশ দিয়ে শেখ হাসিনা গঙ্গাচড়া সেতুর সংযোগ সড়ক হয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অন্য চ্যানেলটি যাচ্ছে এসকেএস বাজারের পাশ দিয়ে। নতুন দুই চ্যানেলের পানি আবার মূল তিস্তায় গিয়ে মিলিত হচ্ছে। আর সৃষ্ট তিস্তার চ্যানেলের পাশের ঘরবাড়ি বিলীন হচ্ছে। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে নদীপারের মানুষ।

স্থানীয়রা বলছে, সেতুর উজানে কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা নামক স্থানে তিস্তার স্রোত গতিপথ পরিবর্তন করে ইচলী এলাকা হয়ে জোড়া সেতু দিয়ে পুনরায় তিস্তার সঙ্গে মিলছে। এতে বিভিন্ন স্থানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, চরম বেকায়দায় পড়েছে চরের লোকজন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মোন্নাফ বলেন, ‘গত বছরও এই এলাকায় ভাঙন ছিল। তবে এতটা নয়। এ বছর ব্যাপক আকারে ভাঙন শুরু হয়েছে। উজানে বাঁধ না দেওয়া পর্যন্ত তিস্তার নতুন এ চ্যানেলটি বন্ধ হবে না। এতে এলাকার কয়েক হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়বে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদের আগে শংকরদহ বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার কারণে পাঁচ গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। সেইসঙ্গে চর ইচলী গ্রামের ২০০ পরিবারের বাড়িঘর বিলীন হয়ে যায়। এখন একটু পানি কমলেও ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। লোকজন বাড়িঘর সরাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চরের মানুষজনের চলাচল সমস্যাসহ বাড়িভাঙা পরিবারগুলো আশ্রয়হীন অবস্থায়।

তিস্তার পানি আবারও বেড়ে প্রবল স্রোতে শেখ হাসিনা গঙ্গাচড়া সেতু পেরিয়ে রংপুর-কাকিনা সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সড়কের একটি সেতুর পাশে ১৫ মিটার জুড়ে ব্লক পিচিং ধসে পড়ায় হুমকিতে পড়েছে সড়কটি। দ্রুত এখানকার ভাঙন রোধ করা না গেলে সড়কটি বিলীন হওয়ার শঙ্কা করছে স্থানীয়রা। তারা জানান, এই সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে রংপুর শহর তথা দেশের যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যাবে।

লক্ষ্মীটারি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, গত এক সপ্তাহে পশ্চিম ইচলী এলাকায় ২০০ পরিবারের বাড়িঘর ভেঙে গেছে। লোকজন এখন অনেক কষ্টে উঁচু স্থানে কিংবা রাস্তায় কোনরকমে দিন পার করছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রকৌশলী এ জেড এম আহসান উল্লাহ বলেন, ‘রংপুর-কাকিনা সড়কের ভাঙন রোধে আপাতত বালির বস্তা ডাম্পিং করা হচ্ছে।’

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান বলেন, যেহেতু তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে, এ কারণে  সেখানে সমীক্ষা করার পর প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসন আয়োজিত সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ

সর্বশেষ - সব খবর