রবিবার , ৩ জুলাই ২০১৬ | ১৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

খালেদা জিয়ার পুরো বক্তব্য

Paris
জুলাই ৩, ২০১৬ ৫:৫৯ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আস্সালামু আলাইকুম।

 

গভীর বেদনাভরা মন নিয়ে আপনাদের সামনে এসেছি। আমাদের জাতীয় জীবনের এক মহা সংকটের সময় এখন। গত শুক্রবার রাতে রাজধানী ঢাকায় এক ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। কূটনৈতিক এলাকার কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, গ্রেনেড ও বোমা নিয়ে সন্ত্রাসী দল ঢুকে পড়তে সক্ষম হয়। তারা গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের একটি স্প্যানিশ রেস্তোরাঁয় ঝটিকা আক্রমণ চালিয়ে সেখানে অবস্থিত দেশী-বিদেশী নাগরিকদের জিম্মি করে।

 

আইন-শৃংখলা বাহনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিয়ান চালাতে গেলে সন্ত্রাসীদের গুলী-বোমায় দু’জন পুলিশ অফিসার নিহত ও অনেকে আহত হন। রাতেই সন্ত্রাসীরা তাদের হাতে জিম্মি দেশী-বিদেশী ২০ জন নিরপরাধ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এই পৈশাচিক সন্ত্রাসী হামলা এবং নারীসহ দেশী-বিদেশী নির্দোষ নাগরিকদের এভাবে হত্যার ঘটনার নিন্দা করার কোন ভাষা নেই। আমরা গভীর বেদনাহত এবং ক্ষুব্ধ। কোনো অজুহাতেই শান্তিপ্রিয় নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা সুস্থতার লক্ষণ নয়। এই বিকারগ্রস্ততার প্রতি আমরা তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করছি।

 

বাংলাদেশ ও বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের সঙ্গে আমরাও শংকিত। কারণ এই ঘটনায় আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা ও ত্রুটি এবং সন্ত্রাসীদের সামর্থ প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। আমরা এর আগে সন্ত্রাসীদের চোরাগোপ্তা হামলার সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। কিন্তু এখন তা আর চোরাগোপ্তা হামলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আমরা গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন। কারণ আমাদের এই শান্তিপ্রিয় মানুষের দেশে ভয়াবহ সন্ত্রাসের দানব গোপনে বেড়ে উঠেছে। তারা এখন পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে প্রকাশ্যেই ভয়ংকর ছোবল হানছে। দুর্ভাগ্য জনক ভাবে বাস্তবতাকে অস্বীকার করে পরিস্থিতিকে আরেও অবনতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। দৃশ্যমান শত্রুর তুলনায় অদৃশ্য শত্রুর হামলা মোকাবিলা এবং তাদের দমন করা অনেক কঠিন। এই কথা জানি বলেই আমরা এতোটা উৎকণ্ঠিত।

 

সুপ্রিয় সাংবাদিক বন্ধুরা,
শুক্রবার রাতের রক্তক্ষয়ী ঘটনার অবসান ঘটেছে শনিবার সকালে আমাদের সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত কম্যান্ডো অভিযানের মাধ্যমে। এতে সন্ত্রাসীদের হত্যা, সন্দেহভাজন হিসেবে আটক এবং জিম্মি দশা থেকে ১৩ জন দেশী-বিদেশী নাগরিককে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

 

আমরা সাময়িক স্বস্তি পেয়েছি। এরজন্য আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।

 

আমি সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই জাতীয় জীবনের এমন সংকটে তাদের সামার্থ ও অনিবার্য প্রয়োজন আরেকবার প্রমাণ করার জন্য।

 

এই অভিযানে নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী অন্যান্য সংস্থা, অগ্নিনির্বাপক দল এবং গোয়েন্দা সংস্থা সমূহের যে-সব সদস্য অসম সাহসিকতার সঙ্গে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন আমি তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিকসহ কর্তব্যরত সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাই।

 

পুলিশ বাহিনীর যে দু’জন অফিসার উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে শুক্রবার রাতেই জীবন দিয়েছেন, আমি তাদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করছি।

 

তাদের শোকার্ত স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। বিদেহী রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। যারা আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। তারা যেন দ্রুত সেরে ওঠেন, সেই দোয়া করছি।

 

সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশী নাগরিক তিন জন সম্ভবনাময় তরুণ-তরুনীকে হত্যা করেছে। আমি তাদের রুহের মাগফিতার কামনা করছি। শোকাহত পরিবার বর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। ইতালীর ৯ জন জাপানের ৭ জন এবং ভারতীয় একজন নাগরিক সন্ত্রাসীদের হাতে নিষ্ঠুরভাবে অসহায় মৃত্যুর শিকার হয়েছেন। এই বিদেশী নাগরিকেরা পোশাক শিল্পের ক্রেতা হিসাবে এবং ব্যবসা, চাকরি ও পর্যটনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আসেন। আমি তাদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাদের নিজ নিজ পরিবার এবং ইতালী, জাপান, যুক্তরাষ্ট ও ভারতের সরকার এবং জনগণের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।

 

কোন সুস্থ ও বিবেকবান মানুষ এধরনের কাপুরুষোচিত হামলা ও নিরপরাধ মানুষের হত্যাযজ্ঞকে মেনে নিতে পারেনা। এমন অযৌক্তিক, নিষ্ঠুর, হঠকারী ও ভুল পথে কোনো কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়। কোনো আদর্শ কিংবা ধর্মই এ ধরণের কাণ্ডজ্ঞানহীন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অনুমোদন করে না। শান্তির ধর্ম পবিত্র ইসলাম নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা এবং সন্ত্রাসের ঘোর বিরোধী। তাই সংযম সাধনার মহিমান্বিত মাস রমজানে এই রক্তপাত প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে স্তম্ভিত করেছে।

 

সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
ভৌগলিক ও রাষ্ট্রীয় গণ্ডি পেরিয়ে সন্ত্রাস আজ বিশ্বের দেশে দেশে রক্ত ঝরাচ্ছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিও আজ সন্ত্রাসের বিষাক্ত ছোবল জর্জরিত। এটা আমাদের জন্য নতুন এক ভয়াবহ জাতীয় সংকট। শুক্রবার রাতের ঘটনায় শুধু একটি রেস্তোরাঁ নয়, সারা বাংলাদেশ আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, শান্তি, স্থিতিশীলতা, আমাদের বিশ্বাস ও আস্থা। আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, ব্যবস্যা-বাণিজ্য, জীবনযাপন পদ্ধতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই সকলের মিলিত প্রয়াসে আমাদেরকে এ সংকট মোকাবিলা করতে হবে।

 

আমাদের এই বিপদের দিনে সহানুভূতি ও সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে যেসব বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমি আশা করি আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে তারা সন্ত্রাস মোকাবিলায় সম্ভাব্য সকল ধরণের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। তবে নির্দিষ্ট ভূখন্ডে সন্ত্রাস মোকাবেলায় প্রথম কর্তব্য হচ্ছে সে দেশের সরকার ও জনগণের। বর্তমানে আমরা সন্ত্রাসের যে চিত্র দেখছি সেটা নিছক আইন-শৃংখলা জনিত মামুলী কোনো সমস্যা নয়। কেবল আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান দিয়ে এই সন্ত্রাস মোকাবিলা করা যাবেনা। এই সংকটের শেকড় আরো অনেক গভীরে। সন্ত্রাস দমন কার্যক্রমকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে গেলে এই সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। এই বিষয়টির দিকে আমি সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করে সতেচন হবার আহ্বান জানাচ্ছি।

 

আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে গণতন্ত্রহীন দেশে, স্বৈরাচারী শাসন, অসহিষ্ণু রাজনীতি, দমন-পীড়নের রাষ্ট্রব্যবস্থা, অধিকারহীন সমাজ, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য-বঞ্চনা এবং সুশিক্ষার অভাব ক্রমাগত চলতে থাকলে সেখানে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পদক্ষেপের মাধ্যমে এই কারণ গুলো দূর না করলে সমাজ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করা যায়না। আমি মনে করি জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এ ধরনের জাতীয় সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব নয়। কেবল গণতান্ত্রিক পরিবেশই জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হতে পারে।

 

শুধু শুক্রবার রাতের ঘটনাই নয়। সারা বাংলাদেশ আজ সন্ত্রাসের থাবায় ক্ষতবিক্ষত।  মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিম, মন্দিরের পুরোহিত, ধর্মগুরু ও যাজক, ভিন্ন মতের লেখক প্রকাশক-ব্লগার, খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের নৃশংস ভাবে হত্যা করা হচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে আমাদের সযতেœ লালিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য। কোথাও কেউ নিরাপদ নয়। এই আতঙ্ক, এই হত্যালীলা থামাতে হবে। বন্ধ করতে হবে রক্তপাত। আমাদেরকে একতাবদ্ধ হতেই হবে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

 

কে ক্ষমতায় থাকবে, কে ক্ষমতায় যাবে, সেটা আজ বড় কথা নয়। আজ আমরা যারা আছি, আগামীতে তারা কেউ হয়তো থাকবো না। দেশ থাকবে, জাতি থাকবে। সেই দেশ ও জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যত আজ বিপন্ন। আমরা যে যাই বলি, আমাদের কিছুই থাকবেনা, কোনো অর্জনই টিকবে না যদি আমরা সন্ত্রাস দমন করতে না পারি। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারি। তাই কালবিলম্ব না করে, আসুন আমরা সব ভেদাভেদ ভুলে দলমত নির্বিশেষে সন্ত্রাস বিরোধী ঐক্যগড়ে তুলে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলি।

 

রমজান মাসের বিকেলে কষ্ট করে এখানে আসার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।

 

আমি আশা করি আপনাদের মাধ্যমে আমার কথা গুলো সকলের কাছে, সঠিক ভাবে পৌঁছে যাবে।

আমি আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আপনাদেরকে ও আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। ঈদ মোবারক।

 

আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।

সূত্র: কালের কণ্ঠ

সর্বশেষ - রাজনীতি