বৃহস্পতিবার , ১৮ জুলাই ২০২৪ | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর
NBIU Spiring 2025 New Ad

কোটা জটিলতা নিরসনের জন্য আপিল বিভাগের রায়ের অপেক্ষা করা কি একান্ত জরুরি?

Paris
জুলাই ১৮, ২০২৪ ২:৪৪ অপরাহ্ণ

।। ইমদাদুল হক মিলন ।। 

কিছুদিন থেকে শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। চারপাশের সব কিছু দেখে হাসপাতালের বেডে শুয়ে অনেক কিছুই ভালো লাগছে না।

এই পরিবেশ-পরিস্থিতি কোনোভাবেই কাম্য ছিল না স্বাধীন বাংলাদেশে এত দিন পর। সাত ছাত্রের বেদনাদায়ক মৃত্যু স্তম্ভিত করেছে আমাদের সবাইকে। রংপুরের ঘটনাটি কেউই মানতে পারছেন না। ঘটে যাওয়া দুঃখজনক সব ঘটনাবলির বিচার এখন সময়ের দাবি। বিশ্বাস করি দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আমরা শান্তি ও স্বস্তির বাংলাদেশ দেখতে চাই। আর এ কারণে আমাদের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের দাবিকে ইতিবাচক বিবেচনায় নিতে হবে। দ্রুততম সময়ে তা বাস্তবায়ন করে নিরসন করতে হবে চলমান সংকটের। অন্যথায় স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জনই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

একজন লেখক হিসেবে মনে করি কোনো কিছু অসম্ভব নয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিলেই সম্ভব। একজন সংবিধান বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বললাম। জানতে চাইলাম কোটা জটিলতা নিরসনের জন্য আপিল বিভাগের রায়ের অপেক্ষা করা কি একান্ত জরুরি? আমাকে সেই বিশেষজ্ঞ বললেন, রাষ্ট্র ও সরকার জরুরি মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই সংবিধান, বিচার বিভাগ জনগণের জন্য। আমাদের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের দাবি নিয়ে আর সময়ক্ষেপণ নয়। দ্রুত সিদ্ধান্তে আসতে হবে। বন্ধ করতে হবে সব রক্তপাত, সংঘাত, সংঘর্ষ।

আদালতের ওপর নির্ভরশীলতা নিয়ে আমার একজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ বন্ধু জানালেন, সরকার চাইলে এক ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে কোটা বিষয়ে অধ্যাদেশ প্রণয়ন করে বর্তমান রক্তপাত বন্ধ করতে পারে। কোটা বিষয়ে অধ্যাদেশ প্রণয়ন হাইকোর্টের রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না। এমনকি কেউ যদি মনে করেন অধ্যাদেশ প্রণয়ন হাইকোর্টের রায়ের সাংঘর্ষিক বা আপিল বিভাগে বিচারাধীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ হবে, তাদের উদ্দেশ্যে সবিনয়ে বলতে চাই, রাষ্ট্রপতির (প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে) যে কোনো বিষয়ে অধ্যাদেশ প্রণয়নের সাংবিধানিক ক্ষমতা হাইকোর্ট বা আপিল বিভাগ খর্ব করতে পারে না। তবে অধ্যাদেশটি সংবিধানসম্মত কীনা তা আদালত বিচার করতে পারে।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ বন্ধু আরও বললেন, কোটা বিষয়ে আমার জানা মতে, কোনো আইন (জাতীয় সংসদে পাস করা আইন বা অধ্যাদেশ) নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোটা বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে অধ্যাদেশ (আইন) প্রণয়ন করা আবশ্যক। আদালতের রায়ের অপেক্ষা করা বা সংসদের পরবর্তী অধিবেশনের অপেক্ষা করা বর্তমান সংঘর্ষকে আরো দীর্ঘায়িত করতে পারে। সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকদের মধ্যে যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে তা গৌরবের প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ সব বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংস করে দিবে।

সংবিধানের আর্টিকেল ৯৩ রাষ্ট্রপতিকে অর্ডিন্যান্স (আইন) প্রণয়নের যে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করেছে। ৯৩(১) অনুচ্ছেদে রয়েছে ‘সংসদ ভাঙিয়া যাওয়া অবস্থায় অথবা উহার অধিবেশনকাল ব্যতীত কোনো সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে বলিয়া সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে তিনি উক্ত পরিস্থিতিতে যেরূপ প্রয়োজনীয় বলিয়া মনে করিবেন, সেইরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারি করিতে পারিবেন এবং জারি হইবার সময় হইতে অনুরূপভাবে প্রণীত অধ্যাদেশ সংসদের আইনের ন্যায় ক্ষমতাসম্পন্ন হইবে : তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার অধীন কোনো অধ্যাদেশে এমন কোনো বিধান করা হইবে না, (ক) যাহা এই সংবিধানের অধীন সংসদের আইন-দ্বারা আইনসঙ্গতভাবে করা যায় না; (খ) যাহাতে এই সংবিধানের কোনো বিধান পরিবর্তিত বা রহিত হইয়া যায়; অথবা (গ) যাহার দ্বারা পূর্বে প্রণীত কোনো অধ্যাদেশের যে কোনো বিধানকে অব্যাহতভাবে বলবৎ করা যায়। (২) এই অনুচ্ছেদের (১) দফার অধীন প্রণীত কোনো অধ্যাদেশ জারি হইবার পর অনুষ্ঠিত সংসদের প্রথম বৈঠকে তাহা উপস্থাপিত হইবে এবং ইতঃপূর্বে বাতিল না হইয়া থাকিলে অধ্যাদেশটি অনুরূপভাবে উপস্থাপনের পর ত্রিশ দিন অতিবাহিত হইলে কিংবা অনুরূপ মেয়াদ উত্তীর্ণ হইবার পূর্বে তাহা অননুমোদন করিয়া সংসদে প্রস্তাব গৃহীত হইলে অধ্যাদেশটির কার্যকরতা লোপ পাইবে। ’’

লেখক হিসেবে এত সংবিধান বুঝি না। দেশটা বুঝি। মানুষের কষ্ট বুঝি। দেশের কোনো খারাপ কিছু চোখে পড়লে মনটা কেঁদে উঠে। সব কিছু এলোমেলো মনে হয়। বাংলাদেশ একটা কঠিন সময় অতিক্রম করছে। আর কোনো মায়ের কোল খালি হতে দেওয়া যাবে না। সংঘাত তৈরি করে তৃতীয় কোনো সুযোগ সন্ধানীকে মাঠে নামতে দেওয়া যাবে না। তাই দেশের স্বার্থে, আগামীর সুন্দর বাংলাদেশ ধরে রাখার জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিনয়ের সঙ্গে আবেদন দ্রুত উদ্যোগ নিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীরা আমাদের সন্তান, আমাদের আগামী। রংপুরের বেদনাবিদুর ঘটনাটি কেউই মেনে নিতে পারছে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে হিসেবে আপনি পারেন অনেক কিছু করতে। রংপুরসহ সব হত্যার বিচারের ব্যবস্থা নিন। আর যত দ্রুত সম্ভব আদালতের জটিলতাকে সরিয়ে সংবিধানে আপনাকে দেওয়া ক্ষমতাবলে সিদ্ধান্ত নিন। খেয়াল রাখুন এ ঘটনায় কেউ যাতে অপব্যবহার না করতে পারে। বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে, এগিয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিতর্ক বন্ধ করতেই সংকটের দ্রুত নিরসন প্রয়োজন।