বুধবার , ২৩ অক্টোবর ২০২৪ | ৮ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

কুরআনের ভাষায় কুরআনের যত পরিচয়

Paris
অক্টোবর ২৩, ২০২৪ ৮:১৯ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

পবিত্র কুরআন আল্লাহ তাআলার কালাম। বিশ্বের সব মানুষের হিদায়াতের জন্য নাজিল করা হয়েছে এ মহাগ্রন্থ। কুরআন প্রচারক ছিলেন মহানবী মুহাম্মাদ (সা.)। বাহক ছিলেন জিবরাঈল (আ.)। মক্কা-মদিনার বুকে দীর্ঘ ২৩ বছরে কুরআন নাজিল হওয়া সম্পন্ন হয়েছে।

বিভিন্ন সুরায় কুরআন নিজেই তার পরিচয় ব্যক্ত করেছে। কুরআনের প্রত্যেকটি আয়াতকে প্রতি বিশ্বাস করা সকল মুসলমানের জন্য অত্যাবশ্যক। সামান্য সন্দেহ বা কোন অংশকে নিয়ে অবিশ্বাসের কোন সুযোগ নেই।

কুরআনের পরিচয়:

কুরআন কি ও কেন? এ প্রশ্নের উত্তর কুরআন নিজেই প্রদান করেছে। বর্ণিত হয়েছে, আলিফ লাম মিম । এটা এমন একটি কিতাব, যার মধ্যে কোন সন্দেহ-সংশয় নেই । এটি হচ্ছে আল্লাহভীরুদের জন্য পথ-প্রদর্শক। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১ু২)

কুরআনের ভাষা:

আরবী ভাষায় কুরআন নাজিল করা হয়েছে। কারণ আরবী ভাষা সবচেয়ে প্রাঞ্জল ভাষা এবং সবচেয়ে প্রশস্ত ভাষা। তাই আল্লাহ তাআলা তার সবচেয়ে সম্মানিত কিতাবটি সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষায় সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুলের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ ফিরিশতার মাধ্যমে সর্বশ্রেষ্ঠ ভূমিতে পাঠিয়েছেন। বর্ণিত হয়েছে, নিশ্চয়ই আমি কুরআনকে আরবি ভাষা অবতীর্ণ করেছি,যাতে তোমরা বুঝতে পারো। (সুরা ইউসুফ, আয়াত:২)

প্রথম অবতীর্ণ আয়াত:

নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে প্রমাণিত হয়েছে সুরা আলাক থেকেই ওহির সূচনা হয় এবং এ সুরার প্রথম পাঁচটি আয়াত পর্যন্ত সর্ব প্রথম অবতীর্ণ হয়। প্রথম আয়াত থেকে ইসলামকেন্দ্রিক শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হয়েছে । বর্ণিত হয়েছেু পড়ো তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। (সুরা আলাক, আয়াত:১)

কুরআন নাজিলের মাস:

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, লাইলাতুল কদরে সমগ্র কুরআন লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হয়েছে । তারপর বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে দীর্ঘ ২৩ বছরের ধীরে ধীরে রাসুল (সা.)এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে । রমজানে কুরআন নাজিল প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছে, রমজান মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সৎপথের সুস্পষ্ট দিশা ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। (সুরা বাকারা, আয়াত:১৮৫)

কুরআন বোঝা সহজ:

কুরআন মুখস্থ করা, এর থেকে উপদেশ ও শিক্ষা অর্জন করা সহজ । ইতোপূর্বে অন্য কোন ঐশীগ্রন্থ এমন ছিল না। তাওরাত, ইঞ্জিল এবং জাবুরের কোন হাফেজ নেই । আর কুরআনের হাফেজের অভাব নেই । ইরশাদ হয়েছে, আর আমি সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, সুতরাং উপদেশ গ্রহণকারী কেউ আছে কি? (সুরা কামার, আয়াত: ১৭)

কুরআন মহৌষধ:

কুরআন অন্তরের মহৌষধ। শিরক, কুচরিত্র ও আত্মিক রোগসমূহ থেকে মুক্তিদাতা । এর থেকে মুমিনরা প্রতিনিয়ত উপকৃত হয় আর কাফেররা উপকৃত হতে পারে না । তাই কুরআনের বর্ণিত হয়েছে,

আমি নাজিল করছি এমন কুরআন, যা মুমিনদের পক্ষে শিফা ও রহমত। তবে জালেমদের ক্ষেত্রে এর দ্বারা ক্ষতি ছাড়া অন্য কিছু বৃদ্ধি হয় না। (সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত:৮২)

উত্তম কাহিনীর বর্ণনা:

কুরআনে শিক্ষা, উপদেশ ও হিকমতের অনেক গল্পগুচ্ছো স্থান পেয়েছে । এগুলোর পূর্ণাঙ্গ বিবরণ পেশ করা হয়নি । যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই উল্লেখ করা হয়েছে । বর্ণিত হয়েছে ,আমি তোমার কাছে উত্তম কাহিনী বর্ণনা করেছি ,যেমনি ভাবে এ কুরআন তোমার কাছে অবতীর্ণ করেছি। (সুরা ইউসুফ, আয়াত:৩)

কুরআন হেফাজতের দায়িত্ব:

আল্লাহ তাআলা কুরআন অবতীর্ণ করেছেন এবং তিনি নিজেই এর সংরক্ষণ ও হেফাজতের দায়িত্ব নিয়েছেন। এজন্যই যুগ যুগ ধরে কুরআনের পাঠ, ভাষা, এবং অর্থ অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। রিসালাত আমলের পর থেকে আজ প্রায় পনেরো শত বছর হয়েছে তবুও কোন দুশমন কুরআনের একটি নোকতা ও পরিবর্তন করতে পারেনি । আল্লাহ তাআলা কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে তা সংরক্ষণ করেছেন । বর্ণিত হয়েছে, নিশ্চয় আমরাই এই স্মরণ (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমরাই এর হেফাজত করব। (সুরা হিজর, আয়াত:৯)

কুরআন পড়ার নির্দেশ:

আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসুলকে (সা.) কুরআন পাঠ এবং ওর দাওয়াতের কাজে নিয়োজিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি সমগ্র জীবনে তা বাস্তবায়ন করেছেন । ইরশাদ হয়েছে, তোমার রবের কিতাব থেকে যে অংশটুকু তোমার কাছে নাজিল হয় তা তেলাওয়াত কর এবং এর কথা পরিবর্তন করার ক্ষমতা কারো নাই। (সুরা কাহাফ, আয়াত:২৭)

কুরআন পড়ার নিয়ম:

কুরআন তারতীল সহকারে পড়তে হয় । অর্থাৎ কুরআনের শব্দগুলো ধীরে ধীরে মুখে উচ্চারণ করার সাথে সাথে তা উপলব্ধি করার জন্য গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনাও করতে হবে। নামাজের কেরাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) এক একটি আয়াত আলাদা আলাদা করে পড়তেন এবং প্রতিটি আয়াত পড়ে থামতেন। এভাবেই সবার কুরআন পড়া উচিত। বর্ণিত হয়েছে, অথবা তার চেয়েও একটু বাড়ান। আর কুরআন তিলাওয়াত করুন ধীরে ধীরে সুস্পষ্টভাবে। (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত:৪)

সকল বিষয়ে আলোচনা:

ইবন মাসউদ (রা.)বলেন, কুরআন আমাদেরকে সবকিছুর জ্ঞান বর্ণনা করেছে এবং সবকিছু জানিয়েছে।

মুজাহিদ (রহ.) বলেন, হালাল ও হারাম জানিয়েছে। তবে ইবন মাসউদ (রা.) এর কথাটি বেশী ব্যাপক। কেননা কুরআনে দুনিয়া ও আখেরাতের প্রয়োজনীয় সকল তথ্য আছে। সর্বোপরি মুমিনদের জন্য আছে হিদায়াত,রহমত ও সুসংবাদ।

বর্ণিত হয়েছে, আমরা তোমার ওপর এমন কিতাব অবতীর্ণ করেছি যা সকল বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনাকারী আর মুসলমানদের জন্য হিদায়াত ,রহমত এবং সুসংবাদ। (সুরা নাহল, আয়াত:৮৯)

তেলাওয়াতে ঈমান বাড়ে :

একজন পরিপূর্ণ মুমিনের সামনে যখন কুরআনের আয়াত পাঠ করা হয় তখনই তার ঈমান বৃদ্ধি পায় । সৎকর্মের প্রতি অনুরাগ বাড়ে । মনোযোগের সাথে কুরআন তেলাওয়াত শোনা ,বোঝা ও আদব রক্ষা না হলে অন্য সাধারণ মুসলিমদের উচ্চতর ফলাফল ও সৃষ্টি হয় না । বর্ণিত হয়েছে, মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহকে স্মরণ করা হলে কম্পিত হয় এবং তাঁর আয়াতসমূহ তাদের নিকট পাঠ করা হলে তা তাদের ঈমান বর্ধিত করে । আর তারা তাদের রবের ওপর ভরসা করে। (সুরা আনফাল, আয়াত:২)

কুরআন মানবজাতির জন্য:

কুরআন মানব জাতির কল্যাণে প্রেরণ করা হয়েছে। এর দ্বারা রাসুলুল্লাহকে (সা.) বিতণ্ডা প্রিয় উম্মতকে আজাব থেকে সতর্ক করতে বলা হয়েছে । কাফেরদের জন্য ভীতি প্রদর্শন আর মুমিনদের জন্য সুসংবাদ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে । বর্ণিত হয়েছে, এটি একটি গ্রন্থ, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে । অতএব এ কিতাব দিয়ে ভীতি প্রদর্শন করতে আপনার মনে কোনরূপ সংকীর্ণতা থাকা উচিত নয় । আর এটা মুমিনদের জন্য উপদেশ। (সুরা আরাফ, আয়াত:২)

পবিত্র হয়ে কুরআন পড়া:

কুরআন সর্বোচ্চ পবিত্র ও মর্যাদা সম্পন্ন একটি গ্রন্থ । তাই পবিত্রতা ও মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে কুরআনে স্পর্শ করার জন্য, পাঠ করার জন্য দৈহিক পবিত্রতার শর্ত আরোপ করা হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে, যারা সম্পূর্ণ পবিত্র তারা ছাড়া অন্য কেউ তা স্পর্শ করে না। (সুরা ওয়াকিয়া, আয়াত: ৭৯)

লেখক: খতিব ও মাদ্রাসা শিক্ষক

 

সূত্র: যুগান্তর

সর্বশেষ - ধর্ম