শনিবার , ২৬ অক্টোবর ২০২৪ | ২১শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

কাহফের আলোকে দাজ্জালি ফিতনা

Paris
অক্টোবর ২৬, ২০২৪ ১০:৫২ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

সুরা কাহফ দাজ্জাল ও দাজ্জালি ফিতনার সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮০৯)

নাওয়াস বিন সামআন (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের যে কেউ দাজ্জালের সময়কাল পাবে সে যেন সুরা কাহফের প্রথমোক্ত আয়াতগুলো পাঠ করে। সে ইরাক ও সিরিয়ার মধ্যপথ থেকে আবির্ভূত হবে। সে ডানে-বাঁয়ে দুর্যোগ সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা অটল থাকবে।’
(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৯৩৭)

উপরোক্ত হাদিসদ্বয় থেকে প্রতীয়মান হয়, রাসুলুল্লাহ (সা.) এই বরকতময় সুরাকে দাজ্জালের যুগের সঙ্গে একটি বিশেষ সম্বোধন দিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। তাই আবশ্যক হলো নবুয়তের আলোকে এ সুরা অধ্যয়ন করা।

দাজ্জাল হলো এক ব্যক্তি এবং একটি ফিতনা বা সিস্টেম। সুরা কাহফে এই সিস্টেমের উপাদানগুলোর আত্মপ্রকাশ লক্ষণীয় বিষয়। সে জন্য এমন দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত, যা ঐশ্বরিক শিক্ষার গভীরে প্রবেশ করতে পারে। সুরা কাহফে তিন ধরনের শিরকের উল্লেখ রয়েছে।

যেগুলো সরাসরি দাজ্জালি ফিতনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে। আর  সাম্প্রতিক সময়ে সেগুলো খুবই ব্যাপকতা লাভ করেছে। নিম্নে বিশদভাবে তা উল্লেখ করা হলো—

আসহাবে কাহফের গল্পের শেষাংশে আল্লাহ তাআলা বলেন : ‘তিনি কাউকেও নিজ কর্তৃত্বের শরিক করেন না।’ (সুরা : আল কাহফ, আয়াত : ২৬)

এই সুরায় বর্ণিত এক ঘটনায় ধনবান ঈমানদার বলেছেন, ‘তিনিই আল্লাহ, আমার প্রতিপালক এবং আমি কাউকেও আমার প্রতিপালকের শরিক করি না।’

(সুরা : আল কাহফ, আয়াত : ৩৮)

অন্যদিকে একজন ঈমানহীন অকৃতজ্ঞ (ব্যক্তি) আফসোস করে বলেছিল : ‘হায়, আমি যদি কাউকেও আমার প্রতিপালকের শরিক না করতাম!’

(সুরা : আল কাহফ, আয়াত : ৪২)

সুরা কাহফের শেষে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সত্কর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।’

(সুরা : আল কাহফ, আয়াত : ১১০)

উপরোক্ত আয়াতগুলো দ্বারা বোঝা যায়, আল্লাহ তাআলার সঙ্গে শরিক বা শিরক করতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। অথচ বর্তমানে আমরা আল্লাহ তাআলার সঙ্গেই মারাত্মক শিরকে লিপ্ত। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিরক হলো তিনটি—১. কর্তৃত্বের শিরক (শিরকে হাকিমিয়্যাহ) ২. প্রভুত্বের শিরক (শিরকে উলুহিয়্যাহ) ৩. দাসত্বের শিরক (শিরকে উবুদিয়্যাহ)।

কর্তৃত্বের শিরক (শিরকে হাকিমিয়্যাহ)

আল্লাহ তাআলার কর্তৃত্বের দৃষ্টিভঙ্গি হলো তিনি ‘শাসকদের শ্রেষ্ঠ শাসক’। মহাবিশ্বের প্রতিটি কণা তাঁর আদেশে আবদ্ধ এবং আকাশের প্রতিটি মাত্রা তাঁর আদেশের মুখাপেক্ষী। তিনি সমগ্র বিশ্বজগতের একক মালিক। তাঁর কর্তৃত্ব চিরন্তন এবং এই চিরন্তন কর্তৃত্বের মূলনীতি হচ্ছে তাঁর আদেশেই এই বিশ্ব পরিচালিত হবে এবং তাঁর ওপর কারো কর্তৃত্ব নেই। তিনিই একক ও অদ্বিতীয় কর্তৃত্বের মালিক। সুতরাং এটা তখনই সম্ভব যখন আমরা (আল ইয়াউমা আকমালতু লাকুম দ্বিনাকুম)-এর দ্বিন (ব্যবস্থা) বাস্তবায়ন করব। অতএব, দাজ্জালি যুগের একটি বড় তাগুত (খোদাদ্রোহী) হলো ঐশী ব্যবস্থা থেকে বিচ্যুতি। সাম্যবাদ (Communism), সমাজতন্ত্র  (Socialism), সাম্রাজ্যবাদ  (Imperialism), গণতন্ত্র  (Democracy) ইত্যাদি ব্যবস্থাই ‘তাওহীদে হাকিমিয়্যাহ’ (একেশ্বরবাদী কর্তৃত্ব)-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

আল্লাহ ছাড়া যাদের বা যা কিছুর ইবাদত, আনুগত্য, অনুসরণ এবং যাদের বা যা কিছুর প্রতি আত্মসমর্পণ করা হয় তার সবই তাগুত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান দেওয়ার ক্ষমতা নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত কোরো না।’ (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৪০)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ হচ্ছেন আল-হাকাম (বিচারক) এবং হুকুম (বিধান, আইন প্রণয়ন) হলো তাঁর অধিকার।’

(সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৯৫৭)

আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি হলো হাকিমিয়্যাহ (কর্তৃত্ব)। যখনই কেউ কোনো জাতি বা সম্প্রদায়ের জন্য আইন প্রণয়ন করে, তখনই সে নিজেকে আল্লাহর বদলে এমন আরেক প্রভুর ভূমিকায় বসিয়ে নেয়, যার আইনের আনুগত্য ও অনুসরণ করা হয়। আর যারা এই আইন প্রণেতা বা আইন প্রণেতাদের আনুগত্য করে, তারা আল্লাহর গোলামের পরিবর্তে আইন প্রণেতাদের গোলামে পরিণত হয়। তারা অনুসরণ করে আইন প্রণেতাদের সৃষ্ট দ্বিনের, আল্লাহর দ্বিন ইসলামের না। এটা আকিদার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়। এটা হলো ঈমান ও কুফরের আকিদা।

প্রভুত্বের শিরক (শিরকে উলুহিয়্যাহ)

আল্লাহ তাআলাকে চেনার প্রথম ধাপ হলো প্রভুত্বের গুণাবলি উপলব্ধি করা। বস্তুবাদী সমাজ এই বোধ ও উপলব্ধি থেকে বঞ্চিত। ধর্মনিরপেক্ষতা

(Secularism) হলো তার প্রথম ধাপ এবং প্রভুত্ব (আল্লাহকে) অস্বীকার করা হলো চূড়ান্ত ও শেষ ধাপ। ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ মানুষকে সব ধরনের নিয়ম-কানুন থেকে মুক্ত করে বাঁচার অধিকার দেয়। এমনকি ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে বসবাসকারী একজন ব্যক্তিরও এই স্বাধীনতা আছে যে আল্লাহকে গ্রহণ করা বা না করা এবং সে চাইলে (আল্লাহ বা ইসলামকে নিয়ে) ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে পারে (নাউজুবিল্লাহ)।

অতএব, আল্লাহ তাআলার বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলিকে (প্রভুত্ব) অস্বীকারকারী ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাধারাই হলো দাজ্জালি যুগের দ্বিতীয় প্রধান তাগুত (খোদাদ্রোহী)।

দাসত্বের শিরক (শিরকে উবুদিয়্যাহ)

মানুষের চিন্তাধারা ও কর্মের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই, যা দাসত্বের (ইবাদত) সীমার বাইরে। দাসত্ব (ইবাদত) মানুষের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় দিকই অন্তর্ভুক্ত করে। সুরা কাহফের শেষ আয়াতে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে আল্লাহর সাক্ষাতের আশা (অর্থাৎ আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস) এবং নেক আমলের আকাঙ্ক্ষা ইবাদতের মূল উপাদান। মানুষের প্রতিটি ভালো কাজ ইবাদতের (দাসত্ব) সঙ্গে জড়িত এবং তার প্রতিটি খারাপ কাজ আল্লাহ তাআলার ইবাদতের (দাসত্ব) পরিপন্থী। পরকালের প্রতি বিশ্বাসই সৎ কাজের ভিত্তি। কেন মানুষ ধর্মের বিধি-নিষেধ ও নৈতিকতার বিধি-বিধান মানতে রাজি হয়? কারণ সে জানে বিচার দিবসে (কিয়ামত) তাকে স্বীয় কর্মের মাপকাঠির পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। পরকালে বিশ্বাস (স্বীয় রবের সাক্ষাৎ কামনা), যা মানুষকে ইবাদতের (দাসত্ব) দাবি মেনে নিতে প্ররোচিত করে এবং এতে অবিশ্বাসই মানুষকে সব ধরনের নিয়ম-শৃঙ্খলা থেকে মুক্ত করে তাকে আত্মপূজার গভীর লাঞ্ছনা ও অপমানে নিমজ্জিত করে। আর যখন মানুষ আত্মপূজার ফাঁদে আটকা পড়ে, তখন তার পাপের সীমা থাকে না। যখন কেউ একবার আত্মপূজার ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, তখন এই ব্যাধি থেকে আরোগ্য অসম্ভব না হলেও খুব কঠিন হয়ে পড়ে। এই আত্মপূজা প্রকাশ পেয়েছে পশ্চিমাদের স্বাধীনতায় আর এই আত্মপূজাই হলো দাজ্জালি যুগের তৃতীয় বড় তাগুত (খোদাদ্রোহী)।

আমরা যদি আধুনিক যুগে শিরকের বহিঃপ্রকাশ দেখতে চাই, তাহলে আমরা সহজেই কর্তৃত্ব, প্রভুত্ব ও দাসত্বের দাবি থেকে বিচ্যুত হওয়ার আকারে দেখতে পাব। শিরক যে রূপই হোক না কেন, তা এই তিনটি বৃত্তের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এই তিনটি তাগুত (খোদাদ্রোহী) অস্বীকার না করলে পূর্ণাঙ্গ তাওহিদের (তাওহিদে কামেল) ধারণা শূন্যই থেকে যাবে।

লেখক : গবেষক ও প্রাবন্ধিক

 

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন

সর্বশেষ - ধর্ম