কক্সবাজারে ১৯ ‘দালাল’ ট্যুরিস্ট পুলিশের হাতে আটক

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

সাধারণ পোশাকে পর্যটক সেজে অভিযান চালিয়ে কক্সবাজারের ট্যুরিস্ট পুলিশ বিভিন্ন  হোটেল-মোটেলের দালালচক্রের ১৯ জনকে আটক করেছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা ধরে শহরের কলাতলী মোড়ের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। পুলিশের হাতে আটক হওয়া দালালদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের কম দামে ভালো হোটেলকক্ষ ভাড়া করিয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা ও হয়রানি করে আসছিলেন।

গ্রেপ্তারকৃত দালালদের আদালতে চালান করা হলে বিজ্ঞ জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আবুল মনসুর সিদ্দিকী তাদের প্রত্যেককে তিন দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠান।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কম দামে ভালো হোটেলকক্ষ ভাড়ায় নিয়ে দেওয়ার কথা বলে দালালচক্রের সদস্যরা কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের হয়রানি করে আসছেন। এরা স্থানীয়ভাবে ‘হোটেলের দালাল’ হিসাবে পরিচিত। এসব দালালের মধ্যে অটোরিকশাচালক, পর্যটন ব্যবসায়ী পরিচয়ধারীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে কক্সবাজারে আয়-রোজগারের উদ্দেশ্যে আসা বেশ কিছু লোক জড়িত রয়েছেন। আবার কিছু অসাধু হোটেল, মোটেল ও কটেজ মালিকরাও পর্যটকদের কক্ষ ভাড়া দিতে কমিশন ভিত্তিতে দালাল নিয়োগ করে থাকেন।

সূত্র জানায়, পর্যটক শিকারি এসব দালালরা শহরের বাস টার্মিনাল এবং দূরপাল্লার বাস কাউন্টারে সার্বক্ষণিক ঘোরাঘুরি করেন। এসব দালালদের বিরুদ্ধে দেশের নানা প্রান্ত থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কম টাকায় নিরাপদে থাকা-খাওয়াসহ সাগর তীরে অবস্থানের সুযোগ করিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি মানসন্মত হোটেল খুঁজে দেওয়ার নাম করে নিম্নমানের হোটেলকক্ষে পর্যটকদের নিয়ে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয় বলেও অনেক পর্যটকের অভিযোগ রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের কাছে।

এই চক্রটির সদস্যরা ভোরে কলাতলি মোড়ের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেন। পরে পর্যটকরা বাস থেকে নামলে তাদের লাগেজ নিয়ে টানাটানি করেন। একপর্যায়ে জোরপূর্বক হোটেলের রুম নিতে বাধ্য করে থাকেন তারা। বিভিন্ন সময় পর্যটকদের হোটেল দেখিয়ে দেওয়ার নাম করে নির্জন স্থানে নিয়ে তাদের সব কিছু লুট করে নেয়ার অভিযোগও রয়েছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, অটোরিকশাচালকরা বাস থেকে নেমে পড়া পর্যটকদের অল্প ভাড়ায় ভালো হোটেলে নিয়ে যাবে বলে অটোতে উঠিয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত হোটেলে নিয়ে যান। সেখানে পৌঁছানোর পর অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ নানা ধরনের ব্ল্যাকমেইল করে থাকেন। এই চক্র পর্যটকদের ফাঁদে ফেলে আপত্তিকর ছবি তুলে টাকা-পয়সাও হাতিয়ে নেয়।
এমনকি গত কয়েক বছর ধরে এ চক্রটি কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের লাইট হাউজ এলাকা ও কলাতলির বিভিন্ন কটেজের পতিতালয়ে নিয়ে নিরীহ মানুষদের ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়েছে। তিনি আরো  বলেন, এসব স্থানে চক্রের সদস্যদের ভাড়া করা কটেজ রয়েছে। কটেজে থাকে রোহিঙ্গাসহ নানা স্থান থেকে সংগ্রহ করা নারীরা। নিরীহ লোকজনদের এসব কটেজে নিয়ে আটকে রেখে ভয়-ভীতি দেখিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়। আর দাবি করা টাকা দিতে অস্বীকার করলে চক্রের নারী সদস্যদের সঙ্গে নিরীহ ভিকটিমের আপত্তিকর ছবি তুলে ভয় দেখিয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আদায় করে থাকে চক্রটি।

দীর্ঘদিন ধরে দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারে নিরবে এসব অপকর্ম চলে আসলেও অসাধু পর্যটন ব্যবসায়ীরা বিষয়টি বরাবরই ধামাচাপা দিয়ে আসছিলেন। এতে পর্যটকদের হয়রানির মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকে। তবুও এতকাল এগিয়ে আসেননি কেউ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে পর্যটন শহরের এমনসব চিত্র প্রকাশিত হলে ট্যুরিস্ট পুলিশের নজরে আসে। তারপরই অভিযানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। তিনি আরো জানান, আটককৃত দালালরা প্রাথমিকভাবে স্বীকারও করেছেন যে, তারা দীর্ঘদিন ধরে এমনসব কাজ করে আসছিলেন।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ