রবিবার , ১৮ আগস্ট ২০২৪ | ২২শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

এমপি, মন্ত্রীরা  কী টাকা ছাপানোর  মেশিন?

Paris
আগস্ট ১৮, ২০২৪ ৫:২২ অপরাহ্ণ

মোঃ হায়দার আলী :
দীর্ঘদিন ব্যস্ত থাকার কারনে লিখার সুযোগ পাইনি,  তাই আজকে কিছুটা সময় পেলাম কী নিয়ে লিখবো সেটা চিন্তাভাবনা করছিলাম। দেশের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতের কর্নধার, তাদের হাতে দেশের নেতৃত্বে থাকলে পথ হারাবে না বাংলাদেশ, দেশ প্রেমিক  ছাত্রসমাজ রাস্তায় ট্রাফিকের কাজ, রাস্তা পরিস্কার করা,  থানায় পাহারা দেয়া, বাজার মনিটারিং করা, হিন্দুদের মন্দির, বাড়ী পাহারা দেয়া, ফুটপাথ দখল মুক্তকরা, রাজশাহীর এক গোলি থেকে কুড়িয়ে পাওয়া ১৮ লাখ টাকা থানায় জমা দেয়া, এসব কাজ করতে গিয়ে একজন শিক্ষার্থী ট্রাক চাঁপায় মারা গেছেন। তারা ১ টি টাকাও  চাঁদাবাজি করেন নি। কিন্ত বিগত দিনে পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ,  রাজনৈতিক কর্মীরা প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন। শিক্ষার্থীরা লাখ লাখ টাকা উদ্ধার করে সেনাবাহনীর হাতে জমা দিয়েছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে। রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজে তাদের শিক্ষকদেরও ছাড় দেন নি এতে শিক্ষকগণ ক্ষিপ্ত না হয়ে শিক্ষার্থীদের প্রশংসা করছেন,  লুট হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে আনা, সারারাত পাহারা দিয়ে  ডাকাত ধরা ও প্রতিরোধসহ  সব ধরনের কাজ করে তারা প্রশাংসা কুড়াচ্ছেন। তারা যে কাজগুলি সারাদেশে করেছেন কোন প্রকার বাজেট ছাড়া, আর এ কাজগুলি করতে যে কোন সরকারকে কোটি কোটি টাকা  বাজেট করতে হতো তারপরেও ভালভাবে করা সম্ভাব হতো না। সে যাই হউক তারা বয়সে ছোট হলেও তাদের নিকট শেখার আছে অনেক, তাদেরকে অনুকরন করণ, অনুসরণ করতে হবে। ভাল কাজের স্বীকৃতি দিতে হবে।  কিন্তু তাদেরকে তো রবিবার থেকে শ্রেণী কার্যক্রম শুরু হয়েছে  দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের শ্রেণী কক্ষে ফিরতে হবে। তাদের পড়াশুনায় মনোযোগী হতে হবে।
শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকবৃন্দ স্বৈরাচার সরকারের চাপিয়ে দেয়া  নতুন কারিকুলামকে গ্রহন করেন নি। এ কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিল মুখী না ডিভাইস মূখী বেশী হয়েছে। তাদের মাঝে পূর্বের মত নকল করার প্রবনতাও ফিরে এসেছে।   প্রশ্ন ও  তার উত্তর  পরীক্ষা শুরুর আগেই ফাঁস হয়ে যাওয়া ।  এ শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীকে মেধা শূন্য করতে এ নতুন  কারিকুলাম যথেষ্ঠ। এ কারিকুলাম বাতিলের দাবীতে অভিভাবক ও  শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে গিয়ে জেল জুলুম,  হয়রানীর  স্বীকার হয়েছেন। জরুরী ভিক্তিতে এ নতুন কারিকুলাম বাতিল কিংবা ব্যাপক সংস্কার চাই শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকগন। সে যাই হউক অন্য একদিন কারিকুলাম সম্পর্কে লেখা যাবে মূল পয়েন্টে ফিরে আসা যাক। মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিদের অবৈধ পথে  কালো টাকার পাহাড়সম সম্পদ গড়ে তুলেছেন,   স্বৈরাচার, খুনি  হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওযার সাথে সাথে  শ শ এমপি, মন্ত্রী,  নেতা, জনপ্রতিনিধি দেশ থেকে পালিয়ে গেছে, কেউ কোটি কোট টাকা আগেই বিদেশে পাচার করেছেন।  কেউ সম্পদ রেখে পালিয়েছন।
কেউ পালাতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছেন, কেউ বা গণ পিটনির স্বীকার হয়েছেন। সাধারণ মানুষের ভিতরে ১৬ বছরের জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখেছেন গণভবণ, সংসদ ভবণ থেকে এমপি, মন্ত্রীর, জনপ্রতিনিধি, নেতাদের বিলাস বহুল বাড়ী, মার্কেট, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভ্যাংচুর, অগ্নি সংযোগ, লুটপাটের মধ্য দিয়ে। নিয়োগবানিজ্য, টেন্ডারবাজি, পুকুর, ভূমি দখল, রাস্তায়, অফিস, ফুটপাথ, ভূমি অফিস, মাদক, খাসজমি, খাদ্যগুদামে ধান,গম, চাল সরবরাহে কোটি কোটি টাকা লুটপাট, সাব রেজিস্টার অফিস, সিন্ডিকেট করে কোটি কোটি টাকা ইনকাম করেছেন। এ অবৈধ আয় করে যদি ক্ষমতা যাওয়ার সাথে সাথে  নিজ দেশে,  নিজবাড়ীতে  থাকেতে না পারেন তা হলে এসব সম্পদের কী দরকার বলেন।  আগে রাজনীতিবিদ, এমপি, মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধিদের সাধারণ জনসাধারণ যথেষ্ঠ সম্মান করতো। এখন তাদের ঘৃণা করেন। আগে জমিদার, কেটিপতিরা, ভদ্র মানুষেরা  রাজনীতি করতো,  তারা রাজনীতি করতে করতে গরীব হয়ে যেত। এখন রাজনীতি করেন ব্যবসায়ী, আমলা, পুলিশ অফিসার, আলু পটল বিক্রেতা, টোকাই, সন্ত্রাসী  মাস্তান, চাঁদাবাজ, মাদকব্যসায়ী, বিভিন্ন শ্রেণীর  দালাল, ভূমি লুটপাটকারী, গোন্ডাপান্ডারা। শূন্য হাতে  রাজনীতি শুরু করে  কয়েক বছরে বাড়ী, গাড়ী, কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলা, মাস্তান বাহনী, ছোট ভাই, বড় ভাই, মামা খালু বলয় সৃষ্ট করে লুটপাট করা। তদের ভাবটা এমন দে মা খেয়ে বাঁচি দেশটা থাক আর যাক এতে কিছু আসে যায় না। তাই তো তাদের  এখন কেউ সন্মান করে না।   উপায়হীনভাবে, বাধ্যহয়ে তাদের অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষ যান। পদত্যাগী সাবেক প্রধান শেখ হাসিনার ভোটারবিহীন সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে হলফনামায় যে হিসাব বিবরণী জামা দিয়েছেন এবং এছাড়া আত্নীয়স্বজন নামে, নামে বেনামে,  যে সব সম্পদের পাহাড় রয়েছে তাতে মনে হয় এমপি মন্ত্রীরা টাকা ইনকামের মেশিন।
 বিগত তিনটি সংসদ  নির্বাচনের সময় এমপি প্রার্থীগণের হলফনামা অনুসন্ধান করে  দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক যুগান্ত, প্রথম আলোসহ জাতীয় দৈনিক, স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন পত্রিকায়, টিভি চ্যালেনসহ বিভিন্ন গনমাধ্যমে এমপি, মন্ত্রীদের সম্পদের পাহাড় নিয়ে বিস্তর  লেখালেখি হয়েছে, তাদের নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া লফনামায় তথ্যের  ভিক্তিতে এসব সংবাদ গুলি প্রকাশিত হয়েছে বলে সাংবাদিকদের লিখার ধরণ দেখে বুঝা গেছে।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের হলফনামায় সরকারের এমপি-মন্ত্রী -প্রতিমন্ত্রী এবং পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও সম্পদের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন। চায়ের দোকান, হোটেল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাবেবী প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত সর্বস্থানে আলোচনা হচ্ছে। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল। বিষয়টি টক অফ দ্য কাউন্টিতে পরিনত হয়েছে।  অনেকেই বলছেন, এমপি, মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ীতে কী টাকা ছাঁপার মেশিন আছে, ইচ্ছামত ছাঁপিয়ে নিচ্ছেন। আরও কত মুখরোচক কথা বলছেন ও লিখছেন। সে যাই হউক এবার আসা যাক কিছু বিখ্যাত  ব্যক্তিদের রাজনীতি সম্পর্কে কিছু বিখ্যাত উক্তি।
কোনও রাজনীতিকের অহংকারকে  কখনই দমাতে যাবেন না।  ড্যান ব্রাউন
রাজনীতিতে মধ্যপন্থা বলতে কিছুই নেই।  জন অ্যাডামস রাজনীতিতে শেষ বলতে কিছুই নেই।  বেনজামিন ডিসরাইলি রাজনীতিতে, কোন কিছুর ব্যাখ্যা করছেন তো আপনি হেরে যাচ্ছেন।  কিথ নাগটন
পলিটিক্স এর প্রকৃত অর্থ হলো: পলি- যার অর্থ একাধিক এবং টিক্স- যার অর্থ রক্তচোষা পরজীবী।  কিনকি ফ্রাইডম্যান
সে কিছুই জানে না; এবং সে ভাবে যে- সে সব জানেন। এটি একটি রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়।  জর্জ বার্নার্ড শো
রাজনীতিতে দুটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ – একটি হলো টাকা আর অন্যটি কী তা আমি মনে করতে পারছি না।  পল উইলসন
একটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সার্বভৌম ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকে।  অ্যারিস্টটল
কোনও রাজনীতিবিদকে শহরের চাবিগুলি দেওয়ার পরিবর্তে তালাগুলি পরিবর্তন করে দেয়াই ভালো।  ডগ লারসনত
রাজনীতি হলো সমস্যা অনুসন্ধান করা, সব জায়গায় এটার খোঁজ করা, এটি ভুলভাবে নির্ণয় করা এবং ভুল প্রতিকার প্রয়োগ করার শিল্প।  গ্রাচো মার্কস
যারা গরীবের ৫ কেজি আটা ১০ কেজি চাউলের লোভ সামলাতে পারে না, তাদের উচিৎ রাজনীতি ছেড়ে ভিক্ষা করা।  শেখ হাসিনা
বিশ্বে রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যপক বিষয়। এটি সামাজিক, আর্থিক, সাংবাদিক, আইনগত এবং বৈশ্বিক পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাজনীতি নির্ধারিত ভাষায়, এটি শক্তির উপর নির্ভর করে যা একটি দেশ, একটি সম্প্রদায় বা একটি সামাজিক গোষ্ঠীর নেতৃত্বের মাধ্যমে ব্যক্ত হয়। রাজনীতির মৌলিক উদ্দেশ্য দেশের প্রশাসন এবং সরকারের গঠন, সামাজিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সমন্বয় ও সংঘটন, আইন এবং শৃঙ্খলার স্থাপন, রাষ্ট্রীয় নীতি গঠন, অর্থনীতি এবং বিদেশনীতি সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি।
এ যেন রুপকথার গল্পের আলাদিনের চেরাগের কাহিনীকে হার মানিয়েছে। ৫ বছর থেকে ১৫ বছরের মধ্যে মন্ত্রী-এমপিরা অর্থসম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। যারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন তাদের বেশির ভাগেরই অর্থ সম্পদ দ্বিগুণ থেকে শতগুণ বেড়ে গেছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, টাকার পাহাড়ে ঘুমান মন্ত্রী এমপিরা। তাই তো নায়ক নায়িকা, গায়ক গায়িকা, ক্রিকেটার, আমলা, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, অভিনেতা, ইউনটিউবার আমলা, সেনা, নৌ, পুলিশসহ  বিভিন্ন বাহনীতে  কর্মরত কর্মকতাগন থেকে রাজমিস্ত্রি যোগালীর ছেলে, ভিখারীর ছেলে, মাদকসম্রাট, মাদক ব্যবসা করে কালো সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, এমন কী যাদের দেহব্যবসার ভিডিও ও ছবি ভাইরাল তারাও এমপি প্রার্থী,  যারা ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার,  মেয়র, কাউন্সারে নির্বাচন করার ক্ষমতা, জনপ্রিয়তা নেই তারও এমপি প্রার্থী হচ্ছেন শুধু মাত্র সম্পদের পাহাড় গড়ার কারনে বলে মন্তব্য করছেন সাধারন মানুষ।
তাই তো মানুষ ভোট প্রদানে  আগ্রাহ হারাচ্ছেন। অথচ নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সরকার কয়েকবার মন্ত্রী এমপিদের সম্পদের হিসাব জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। সময়সীমা বেঁধে দিয়ে গণভবনে মন্ত্রী এমপিদের সম্পদের হিসাব জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু দু’একজন ছাড়া কেউ সম্পদের হিসাব জমা দেননি। ফলে গত কয়েক বছরে দেশের সাধারণ মানুষের অর্থ-সম্পদ কমলেও মন্ত্রী এমপি রাজনৈতিকদের সম্পদ বেড়েছে কয়েকগুণ।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের হলফনামায় সরকারের এমপি-মন্ত্রী -প্রতিমন্ত্রী এবং পাশাপাশি স্বতন্ত্রপ্রার্থীরাও অনেক তথ্য গোপন করছেন। প্রধান মন্ত্রির পদ থেকে পদত্যাগকারী এবং দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা  সরকারে এমপি-মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সম্পদ, আয় এবং অর্থ গত ১৫ বছরে অনেক বেড়ে গেছে। প্রার্থীরা শুধু তাই নয়, নিজেদের সম্পদ ও অর্থ বাড়ার পাশাপাশি সম্পদ বেড়েছে তাদের স্ত্রীদের। তাদের সেকেন্ড হোম, বিদেশে রয়েছে বাড়ী। এ ছাড়া তাদের মধ্যে অনেকের রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি ও বাড়ি।
 ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিক। এমন অভিযোগ করে নির্বাচন কমিশনে প্রার্থিতা বাতিলের জন্য আবেদন করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এ. কে. আজাদ। তার পক্ষে আইনজীবী মো. গোলাম কিবরিয়া আপিল আবেদন জমা দেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিক। মনোনয়ন বাছাইয়ের সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী এ. কে. আজাদ এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্তসহ লিখিত অভিযোগ করা সত্ত্বেও রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম হকের মনোনয়নপত্র বাতিল না করে বৈধ ঘোষণা করেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার এই আদেশের বিরুদ্ধে আজ আপিল দায়ের করা হয়েছিল। গত ১৫ বছরে অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১৩ গুণের বেশি ও তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২ গুণের বেশি।
 আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ঢাকা-১৩ আসনের প্রার্থী প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নগদ টাকা বেড়েছে, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের ৩৭ গুণ আয় বেড়েছে, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদের আয় গত পাঁচ বছরে কমেছে, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর বার্ষিক আয় বেড়েছে ৭ গুণ, পরিবারে গাড়ি বেড়েছে। আবার অনেক প্রার্থীরা কোটিপতি থাকলেও দেখাচ্ছেন ব্যাংক ঋণী। বর্তমান সংসদ সদস্যদের সম্পদ, আয় এবং অর্থ গত ৫ বছরে অনেক বেড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, নিজেদের সম্পদ ও অর্থ বাড়ার পাশাপাশি সম্পদ বেড়েছে তাদের স্ত্রীদেরও। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের গত ১৫ বছরে অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১৩ গুণের বেশি ও তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২ গুণের বেশি বেশি। এই সময়ে ও তার স্ত্রীর সম্পদ একত্রে বেড়েছে ৬ গুণের বেশি। এ সময়ে তাদের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা এবং সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী বিনিয়োগ বেড়েছে। নবম, দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওবায়দুল কাদেরের দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে ওবায়দুল কাদেরের অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ৯৫ টাকা। তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ৪৮ লাখ ৮১ হাজার ৫২২ টাকা। ১৫ বছর পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালে ওবায়দুল কাদেরের অস্থাবর সম্পত্তি ৩ কোটি ২২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৯৮ টাকা এবং তার স্ত্রীর অস্থাবর সম্পত্তি ১ কোটি ২৮ লাখ ৪২ হাজার ৪৬৪ টাকা। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে কাদেরের অস্থাবর সম্পদের প্রায় সবকিছুই জব্দ ছিল। ব্যাংকে তার জমা ছিল প্রায় ৪ লাখ ৮৮ হাজার এবং স্ত্রীর নামে ছিল সাড়ে ৬৯ হাজার টাকা। দুটি হিসাবই জব্দ করা ছিল। বর্তমানে কাদেরের ব্যাংকে জমার পরিমাণ প্রায় ৭৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। তার স্ত্রীর নামে ব্যাংকে জমা আছে প্রায় ৫১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। নিজের কাছে নগদ ৮০ হাজার ও স্ত্রীর কাছে ৭০ হাজার টাকা রয়েছে। গত ১৫ বছর আগে ওবায়দুল কাদেরের বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ছিল সাড়ে ১৫ লাখ টাকা। স্ত্রীর বিনিয়োগ ছিল ৪২ লাখ টাকা। এসব বিনিয়োগও জব্দ ছিল। সর্বশেষ জমা হলফনাতে  কাদেরের সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ আছে প্রায় ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। স্ত্রীর নামে বিনিয়োগ আছে ৭৩ লাখ টাকা। ১৫ বছর আগে ওবায়দুল কাদেরের নিজের কোনো গাড়ি ছিল না। বর্তমানে ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গাড়ি রয়েছে তার।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। নৌকার এ প্রার্থী তার হলফনামায় ব্যাংক, স্ত্রী-কন্যা ও ব্যবসায়িক দায়ের তথ্য জানিয়েছেন। এতে নানক উল্লেখ করেন, স্ত্রীর কাছে ৮৮ লাখ টাকা এবং কন্যার কাছে এক কোটি ৫৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দেনা রয়েছে তার। ঢাকা জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করা হলফনামায় নানক উল্লেখ করেন, অগ্রণী ব্যাংক ও ইউসিবিএলে তার ঋণের পরিমাণ ২ কোটি ৮৬ লাখ ১৯ টাকা। এরমধ্যে অগ্রণী ব্যাংকে তার হোম লোনের পরিমাণ ২ কোটি ৯ লাখ ১৬ হাজার টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে দাখিল করা হফলনামায় রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার পরিমাণ বেড়েছে তিন গুণের বেশি। এবার তার দাখিলকৃত হলফনামায় দেখা গেছে, তার নগদ ও ব্যাংকে গচ্ছিত টাকার পরিমাণ ২১ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ১৭৩ টাকা। অথচ ৫ বছর আগে এই টাকার পরিমাণ ছিল ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৭০৬ টাকা। স্ত্রী ও দুই ছেলের নগদ ও ব্যাংক হিসাবে রয়েছে ২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার, ৯৮৫ টাকা। এমপি শাহরিয়ার আলমের বিভিন্ন কোম্পানিতে শেয়ারের মাধ্যমে বিনিয়োগ রয়েছে ৬৬ কোটি ৪১ লাখ ৩২ হাজার ৭০০ টাকা। এ ছাড়া তার সঞ্চয়পত্রে আমানতে বিনিয়োগ রয়েছে ৩০ লাখ টাকা। নিজের রয়েছে ১ কোটি ১লাখ ৩ হাজার ১০০ টাকা মূল্যের লাক্সারি একটি কার। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ১ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার ৫৭৫ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি। নিজের নামে ৭৫ হাজার টাকা সমমূল্যের স্বর্ণ এবং স্ত্রীর নামে ১৭৫ ভরি স্বর্ণ (যার আনুমানিক মূল্য ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা) রয়েছে। শাহরিয়ার আলমের স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে- ১.৭৯৬৫ একর কৃষি জমি এবং অকৃষি জমির পরিমাণ ১৫.৩৯৪ একর। এমপি শাহরিয়ারের ঢাকার গুলশানে রয়েছে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট এবং নিজ এলাকা বাঘার আড়ানিতে রয়েছে চারতলা বিশিষ্ট একটি বাড়ি।
 গত পাঁচ বছরে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী কর্নেল অব. জাহিদ ফারুক শামীমের আয় বেড়েছে ৩৭ গুণ। একই সময়ে তার স্ত্রী দুই কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার ৯৯৪ টাকার মালিক হয়েছেন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো জমা উল্লেখ করেননি জাহিদ ফারুক শামীম। একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে হলফনামায় দেওয়া তথ্য থেকে এ হিসাব পাওয়া গেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় জাহিদ ফারুক তার স্ত্রীর নামে কোনো সম্পদ উল্লেখ করেননি। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে স্ত্রীর নামে দুই কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার ৯৯৫ টাকা থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমানের আয় ১০ বছরে বেড়েছে পাঁচ গুণের বেশি। কিন্তু এই সময়ে তাঁর সম্পদের পরিমাণ কমে গেছে। অন্যদিকে আগে এনামুরের স্ত্রীর নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ থাকলেও এখন কিছুর উল্লেখ নেই। নির্বাচন কমিশনে এনামুর রহমানের জমা দেওয়া দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা জমা দেওয়া অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের বার্ষিক আয়ের উৎস কমে হয়েছে দুটি শেয়ার, সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংক আমানত (এফডিআর ও ব্যাংক থেকে সুদ) এবং চাকরি (প্রতিমন্ত্রীর সম্মানী ভাতা)। খাত কমলেও এখন তাঁর আয় আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে বছরে ৩৭ লাখ ৮৯ হাজার টাকা; অর্থাৎ এক দশকের ব্যবধানে তাঁর আয় বছরে পাঁচ গুণের বেশি বেড়েছে। এক দশকে আয় বাড়লেও এনামুর রহমানের মোট সম্পদ কমেছে।
গত ১৫ বছর ধরে ঢাকা–১৫ আসনের সংসদ সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদার। এ সময়ে তাঁর নামে থাকা ২১টি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। গত ১৫ বছরে তাঁর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে সাত গুণের বেশি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারে শিল্প প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা কামাল আহমেদের বার্ষিক আয় এই দেড় দশকে বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমানে কামাল আহমেদ মজুমদারের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ১০ কোটি ১৫ লাখ টাকা সমমূল্যের। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তাঁর অস্থাবর সম্পদ ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা সমমূল্যের। এ সময়ে নগদ অর্থ খুব বেশি বাড়েনি। বন্ড, ঋণপত্র ও স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগ বেড়েছে। বর্তমানে এই খাতে ২ কোটি টাকার ওপরে বিনিয়োগ রয়েছে কামাল আহমেদের।
এবারের হলফনামায় বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি ও মোটরসাইকেলের আর্থিক মূল্য ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকার বেশি দেখানো হয়েছে। ১৫ বছর আগে এ খাতের সম্পদ ছিল ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার। নবম সংসদ নির্বাচনের আগে কামরুল ইসলামের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৬৯ লাখ ৪৭ হাজার ৪১১ টাকায়। অর্থাৎ ১৫ বছরে তাঁর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় ৫৫ গুণ। একই সময়ের ব্যবধানে আয় বেড়েছে ২৮ গুণ। কামরুল ইসলাম বর্তমানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তিনি প্রথম সংসদ সদস্য হন ২০০৮ সালে ঢাকা-২ আসনে। তখন তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকার বেশি। ২০০৮ সালে কামরুলের কোনো গাড়ি ছিল না। এখন তাঁর দুটি টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি রয়েছে। হলফনামায় গাড়ি দুটির দাম উল্লেখ করা হয়েছে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার ৪৬২ টাকা। এর মধ্যে একটি গাড়ির মালিক হন ২০১৮ সালের আগে, যা একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় হলফনামায় উল্লেখ করেছিলেন। ১৫ বছর আগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কামরুলের ছিল ৩ লাখ ৮৮ হাজার টাকা আর তাঁর স্ত্রীর নামে ছিল ১০ হাজার টাকা। বর্তমানে সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই কোটি টাকার বেশি।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদের আয় গত পাঁচ বছরে কমেছে। তবে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে কয়েক গুণ। তাঁর স্ত্রীর ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। তবে ১০ বছর আগে ফিরোজ রশীদের স্বর্ণালংকার ও আসবাবের যে মূল্য ছিল, তা একই রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ এবার জাতীয় পার্টি থেকে ঢাকা–৬ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। আগের নির্বাচনগুলোর হলফনামার সঙ্গে এবারের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে ফিরোজ রশীদের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২ গুণের বেশি। স্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় দেড় গুণ। তাঁর স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় সাত গুণ এবং স্থাবর সম্পদ বেড়েছে দুই গুণের বেশি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, সে সময় ফিরোজ রশীদের ২০ হাজার টাকার স্বর্ণালংকার ও ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার আসবাব ছিল।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নগদ টাকা বেড়েছে। গত এক দশকে তাঁর নিজের নগদ টাকা বেড়েছে ১৭ গুণ। আর একই সময়ে স্ত্রীর নগদ টাকা বেড়েছে ১৬ গুণ। নাছিমের নগদ টাকা ৪৪ লাখ ৪৫ হাজার থেকে বেড়ে এখন ৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা হয়েছে। আর স্ত্রীর নগদ টাকা ১৮ লাখ ৯৬ হাজার থেকে বেড়ে তিন কোটি চার লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। দশম ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য বাহাউদ্দিন নাছিমের দাখিল করা হলফনামা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনে নৌকার প্রার্থী হয়েছেন নাছিম। সম্পদের বিবরণীতে নাছিম জানিয়েছেন, স্থায়ী আমানত হিসেবে ব্যাংকে তাঁর জমা আছে ৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আগে এটি ছিল ১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। ১০ বছর আগে তাঁর স্ত্রীর নামে আমানত হিসেবে জমা ছিল ৩১ হাজার ২১৫ টাকা। এখন জমা আছে দেড় কোটি টাকার বেশি। এ ছাড়া বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে নাছিমের বিনিয়োগ আছে ১১ কোটি টাকার বেশি। ১০ বছর আগে এ খাতে তাঁর বিনিয়োগ ছিল ৭ কোটি ৩২ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। তবে বছরে আয় বেশি বাড়েনি পেশাগতভাবে ব্যবসায়ী এ নেতার।
এ দিকে শিক্ষা নগরী হিসেবে পরিচিত  রাজশাহীতে এমপিদের সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর ছয়টি আসনের সংসদ-সদস্য (এমপি) প্রার্থীদের আয় ও সম্পদের পরিমাণ গত পাঁচ বছরে বহুগুণ বেড়ে গেছে। কারও ব্যাংকে টাকা জমা রাখার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কারও জমি ও স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। প্রার্থীদের পাশাপাশি তাদের স্ত্রীদেরও সম্পদ বেড়েছে। সব সময়ের আলোচিত সমালোচিত  প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন-রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী, মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংকে ফারুক চৌধুরীর ৯ কোটি টাকা  রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে ওমর ফারুক চৌধুরীর হাতে ২০১৮ সালে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ৯০ লাখ ৯৫ হাজার ৬০২ টাকা। ওই বছরে তার স্ত্রীর হাতে ছিল ৩৩ লাখ ৯৭ হাজার ১১৪ টাকা। ওই বছরে তাদের ব্যাংক-হিসাবে কোনো অর্থ জমা ছিল না। তবে এ বছর ২৯ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমার দিন ফারুক চৌধুরীর তিনটি ব্যাংক-হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৯৭ লাখ ৩৮ হাজার ৬০৬ টাকা। পাঁচ বছরে তার জ্ঞাত আয় ও আয়ের উৎস না বাড়লেও ব্যাংকে টাকার পরিমাণ বেড়েছে বহুগুণ। হলফনামায় তার আয়ের স্ফীতি সব ক্ষেত্রেই দৃশ্যমান। যদিও নগদ টাকা আগের চেয়ে সামান্য কমেছে। নগদ টাকার পরিমাণ ৮৬ লাখ ৯৬ হাজার ৬৬৬ টাকা উল্লেখ করেছেন তিনি। এ সময় স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেছেন ৪০ লাখ ৬১ হাজার ৭৮০ টাকা। ২০১৮ সালে শেয়ারে কোনো টাকা না থাকলেও পাঁচ বছর পর বিনিয়োগ ২ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। নিজের ও স্ত্রীর চারটি গাড়ির দাম দেখানো হয়েছে ৫৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে রয়েছে শত ভরি স্বর্ণালংকার। ফারুক চৌধুরী নিজের নামে ৬০ বিঘা কৃষিজমি এবং এসব খাত থেকে বছরে সাত লাখ ৫৫ হাজার টাকা আয় উল্লেখ করেছেন। ৮৫ লাখ টাকা মূল্যের নিজের নামে আবাসিক ভবন ছাড়াও ৯৬ লাখ ৮০ হাজার মূল্যের ফ্ল্যাট এবং স্ত্রীর নামে ৬৫ লাখ টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট থাকার কথা উল্লেখ্য করা হয়েছে। এর বাইরে আরও ৫৪ লাখ ৬২ হাজার টাকার বাড়ি অথবা ভবন থাকার কথা বলা হয়েছে।
শূন্য থেকে শুরু করা কালামের সম্পদের ছড়াছড়ি : রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে আবুল কালাম আজাদ মেয়র পদে নির্বাচনে (২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি) হলফনামায় সম্পদের যে বিবরণ দিয়েছিলেন সে তুলনায় বর্তমানে তার সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ। ২০১১ সালে প্রথমবার এবং ২০১৬ সালে দ্বিতীয়বার তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র পদে কালাম নির্বাচিত হন। সংসদ-সদস্য নির্বাচনে হলফনামায় কালাম কৃষি খাত থেকে আয় দেখিয়েছেন এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। তবে মাছচাষ থেকে বছরে আয় করেন এক কোটি এক লাখ টাকা। অন্যসব খাত থেকে এক বছরে আয় করেছেন চার লাখ ৮০ হাজার টাকা। মেয়র হওয়ার আগে কালামের হাতে কোনো নগদ টাকা, মাছের খামার ও কৃষি জমি ছিল না।
কালাম মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার ব্যবহার করেন। এসবের মূল্য ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬০৭ টাকা। এছাড়া তিনি এক কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দামের হার্ডজিপ ব্যবহার করেন। কালামের পিস্তল ও শর্টগানের দাম তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা। তার ৪ দশমিক ৪ একর কৃষি জমি রয়েছে। এর মূল্য ৬২ লাখ ৫০ হাজার ৯০০ টাকা। এছাড়া তার এক কোটি ৪৩ লাখ ৭২ হাজার ৩০০ টাকা দামের পাকা ভবন রয়েছে। তার স্ত্রীর নামেও রয়েছে ২০ লাখ ৬৩ হাজার টাকার সম্পত্তি। ১৭ লাখ টাকা দামের আবাসিক ভবন, ৫০ লাখ টাকা দামের বাণিজ্যিক ভবন, ৮৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা দামের ৮৫ দশমিক ৫০ একর আয়তনের ১০টি মাছের খামারেরও মালিক কালাম। একক নামে বিভিন্ন ব্যাংকে তার এক কোটি ৩৯ হাজার ৪৪৫ টাকা এবং স্ত্রীর সঙ্গে যৌথ নামে ৬৫ লাখ ৫০ হাজার ৬৩৮ টাকা ঋণ রয়েছে। ১২ বছরে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া প্রসঙ্গে আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাছচাষ করে বছরে তিনি এক কোটি টাকা আয় করেন। বিভিন্ন দোকান ভাড়া ছাড়াও কৃষি থেকে তার আয় আছে। ব্যাংক ঋণ নিয়ে তিনি ব্যবসা করেন।
মাছচাষি আয়েন কিনেছেন ৭৫ বিঘা জমি  রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে আয়েন উদ্দিন গত পাঁচ বছরে এলাকায় ৭৫ বিঘা জমি কিনেছেন। ২০১৪ সালে প্রথমবার ও ২০১৮ সালে তিনি দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হন। এবার তিনি দলের মনোনয়ন পাননি। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ২০১৮ সালে তার নামে চার লাখ টাকা দামের দুই বিঘা জমি ছিল। এখন তার নামে জমির পরিমাণ ৭৭ বিঘা। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে তিনি ৭৫ বিঘা জমি কিনেছেন। এসব জমির দাম তিন কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার ৩২৬ টাকা দেখানো হয়েছে। এবারও তিনি ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮০ টাকায় রাজধানীর পূর্বাচলে তিন কাঠার একটি প্লট কিনেছেন। ২০১৩ সালে স্ত্রীর নামে কোনো ফ্ল্যাট ছিল না। ২০১৮ সালে ৩০ লাখ টাকায় তিনি একটি ফ্ল্যাট কেনেন। এবার স্ত্রীর নামে দুটি ফ্ল্যাট দেখানো হয়েছে। দাম আনুমানিক প্রায় ৮৬ লাখ টাকা। ২০১৩ সালে আয়েনের স্ত্রীর হাতে নগদ এক লাখ টাকা ছিল। স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে কোনো টাকা ছিল না। এখন তার শিক্ষক স্ত্রীর হাতে নগদ ১৮ লাখ ২৯ হাজার ৯১৯ টাকা আছে। সঞ্চয়পত্র ১০ লাখ টাকার। আয়ের খাত হিসাবে এমপি হিসাবে পাওয়া সম্মানি ছাড়াও আয়েন মাছচাষ দেখিয়েছেন। ৭৭ একর জমি লিজ নিয়ে তিনি মাছ চাষ করেন বলে উল্লেখ করেছেন। এ খাত থেকে তার বার্ষিক আয় ১১ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। তার হাতে নগদ ৩ লাখ টাকা।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি এনামুল হকের নগদ টাকা কমেছে। তবে ব্যাংকে টাকার পরিমাণ বেড়েছে। ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনবারের এমপি এনামুল এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তার হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ২৫ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় হাতে ছিল ৩৬ লাখ ৭৬ হাজার ৫৯৮ টাকা। স্ত্রীর ছিল এক কোটি ১৩ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬৯ টাকা। এখন তার স্ত্রীর হাতে আছে তিন লাখ টাকা। তবে স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই ব্যাংকে জমা টাকার পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৮ সালে এনামুলের ব্যাংকে ছিল সাত লাখ ৮৭ হাজার ১১৪ টাকা, স্ত্রীর ছিল চার লাখ দুই হাজার ৩২৫ টাকা। ব্যবসা খাতে তার বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এমপি বাদশা। এই আসনে পরপর তৃতীয় মেয়াদ আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য হন বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। গত তৃতীয় মেয়াদে এমপি বাদশাও স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ ও নগদ অর্থে টাকার কুমির বনে গেছেন। শুধু গত ২০১৮ সালের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, নগদ ও ব্যাংক মিলে অর্থ ছিল ৪১ লাখ ১৬ হাজার ৪৮৬ টাকা। এ ছাড়াও স্ত্রীর নগদ টাকা ও সেভিংস মিলে ৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। দুটি গাড়ির দাম দেখানো হয় ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। খন্দকার মার্কেট ও উত্তরায় ৫ কাঠা জমিও নিয়েছেন তিনি। পাঁচ বছরে বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথের বার্ষিক আয় বেড়েছে মাত্র সাড়ে সাত লাখ টাকা। একই সময়ে তাঁর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তাঁর আট লাখ টাকা ঋণ থাকলেও বর্তমানে তাঁর কোনো দায়দেনা নেই।
রাজশাহী-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মনসুর রহমান। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে এই আসন থেকে নির্বাচিত হন। পাঁচ বছরে গড়ে তুলেছেন বিশাল সম্পদ। একই অবস্থা এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারার। তিনি ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মনোনীত সংসদ সদস্য ছিলেন। তারও আছে টাকার ‘পাহাড়’।
এ আসনে এবার আওয়ামী লীগের মমনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারা। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়াই করতে চাইলেও পরিবর্তে  মনোনায়ন প্রত্যাহারের আবেদন করেন। বর্তমান সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মনসুর রহমান। নির্বাচন অফিসে দেওয়া হলফনামায় তাদের টাকার পাহাড়ের বিষয়টি উঠে আসে। ডা. মনসুর রহমান পাঁচ বছরে অনেক সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন। তার হলফনামায় দেখা গেছে, পাঁচ বছরে বার্ষিক আয় বেড়েছে ৬.৫৭ গুণ। ব্যাংকে গড়ে উঠেছে টাকার পাহাড়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মনসুর রহমান শিক্ষকতা, শেয়ার ও চাকরি থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১৪ লাখ ৯ হাজার ৯৬১ টাকা। এবারের হলফনামায় তিনি তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৯২ লাখ ৭০ হাজার ২৮৯ টাকা।
কৃষিখাত থেকেই তার আয় ২৭ লাখ, ভাড়া আদায় ৮৪ হাজার, ব্যবসা থেকে ৬ লাখ ৬০ হাজার, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র থেকে ১৬ লাখ ৩৬ হাজার ৬৩৪ টাকা, চাকরি থেকে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৬৫৩ টাকা এবং অন্য খাত থেকে বছরে আসে ৩৮ লাখ টাকা। এই ৩৮ লাখ টাকার খাত নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি ডা. মনসুর।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, মনসুরের হাতে এখন নগদ আছে ১ লাখ ৯ হাজার ১৬২ টাকা। ২০১৮ সালে ছিল ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ৮৩৪ টাকা। ব্যাংকে ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ১২৪ টাকা। এখন ব্যাংকে আছে ২ কোটি ১৯ লাখ ৯৭ হাজার ১৭৬ টাকা। আগে সঞ্চয়পত্র ছিল ৩৫ লাখ টাকার। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯৭ হাজার ৭৬৭ টাকা।
মনসুরের আগে ঋণ ছিল ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৬১ টাকা। ঋণের পরিমাণ এখন কমে ৮ লাখ ৯৫ হাজার ১৮ টাকায় নেমে এসেছে। এই পাঁচ বছরে ঋণের টাকা প্রায় ১২ লাখ শোধ করেছেন। আগে স্থাবর সম্পদ হিসেবে মনসুরের ৩০ লাখ টাকার জমি ছিল। এবার তার নামে সাড়ে ৩২ বিঘা কৃষিজমি ও ৬ বিঘা পুকুর দেখানো হয়েছে। এই জমি ও পুকুরের মূল্য দেখানো হয়নি।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ দারা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দারার নামে কোনো মামলা নেই। তিনি কৃষিখাত থেকে বছরে ৬ লাখ ১০ হাজার, শেয়ার থেকে ৩ লাখ ৩৪ হাজার ২২৯ টাকা ও একটি কোম্পানির পরিচালক হিসেবে বছরে ২১ লাখ টাকা আয় করেন। তার হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ২ কোটি ২১ লাখ ২৩ হাজার ১৩৭। ব্যাংকে আছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ টাকা। শেয়ার আছে ৪ কোটি ৮৩ লাখ ২৫ হাজার টাকার। সঞ্চয়পত্র আছে ৩৬ লাখ টাকার। ৮১ লাখ ও সাড়ে ২৭ লাখ টাকা দামের দু’টি জিপ আছে।
স্ত্রীর নামেও আছে সাড়ে ১৫ লাখ টাকা দামের একটি জিপ। স্ত্রীর নামে সঞ্চয়পত্র আছে ২ কোটি ২০ লাখ ৬৯ হাজার ১০২ টাকার। শেয়ার আছে আরও ২ কোটি ২০ লাখ টাকার। ব্যাংকে আছে ৩১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। নগদ আছে ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৭৮৯ টাকা।
প্রার্থীর নির্ভরশীলদের নামে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। দারার নামে ৩০৩ ও স্ত্রীর নামে ৩১১ শতাংশ কৃষিজমি আছে। দারা ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই আসনের এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে তিনি আবার ভোটের মাঠে নেমেছেন।
রাজশাহী-৬ আসন থেকে তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম। তিনি শুরু থেকেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল ৯৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৪৯ টাকা। ২০২৩ সালে এসে তার বছরে আয় হয়েছে ৭ কোটি ৯২ লাখ ৯১ হাজার ২৫৪ টাকা।  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এছাড়াও ২০০৮ সালে স্ত্রীর নামে ছিল ২৭ ভরি স্বর্ণ। শাহরিয়ার আলমের নামে ছিল ১৫ ভরি স্বর্ণ। ২০১৩ সালের হলফনামায় দেখা গেছে, নিজের নামে স্বর্ণের মূল্য দেখিয়েছেন ৭৫ হাজার টাকা ও স্ত্রীর নামে দেখিয়েছেন ৩ লাখ টাকার স্বর্ণ। ২০১৮ সালে তিনি একই দেখান। ২০২৩ সালে এসে স্ত্রীর নামে হয়েছে ১৭৫ ভরি স্বর্ণ। নিজের নামে দেখান ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণ।
শাহরিয়ার আলমের ২০১৮ সালের হলফনামায় দেখা গেছে, ওই সময় তার বার্ষিক আয় ছিল ৩ কোটি ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৮৮ টাকা। এখন তা আড়াই গুণেরও বেশি বেড়ে হয়েছে ৭ কোটি ৯২ লাখ ৯১ হাজার ২৫৪ টাকা। শাহরিয়ার আলমের হাতে নগদ টাকাও বেড়েছে তিন গুণের বেশি। ২০১৮ সালে নগদ ছিল ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৯ হাজার ৭০৬ টাকা। এখন আছে ২১ কোটি ৪৫ লাখ ৪৯ হাজার ১৫৩ টাকা।
শাহরিয়ার আলমের শেয়ার আছে ৬৬ কোটি ৪১ লাখ ৩২ হাজার ৭০০ টাকার। আগে শেয়ার ছিল ৫৮ কোটি ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫০ টাকার। আগে সঞ্চয়পত্র ছিল ১০ লাখ টাকার, এখন ৩০ লাখ টাকার। পাঁচ বছর আগে শাহরিয়ারের গাড়ির দাম ছিল ৭৬ লাখ ৬৩ হাজার ৩১৫ টাকা। এখন বিলাসবহুল গাড়ির দাম ১ কোটি ১০ লাখ ৩ হাজার ১০০ টাকা।
২০০৮ সালে শাহরিয়ার যখন প্রথমবার এমপি হন, তখন তার হাতে নগদ টাকা ছিল ১ কোটি ৬৬ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৫ টাকা। ব্যাংকে ছিল মাত্র ৪ হাজার ১৩৬ টাকা। ২০১৩ সালের নির্বাচনের সময় ব্যাংকে কোনো টাকাই ছিল না নিজের নামে। এখন স্ত্রী-সন্তানদের নামেও বিপুল সম্পদ রয়েছে।
শাহরিয়ার আলম কোম্পানির শেয়ার, কৃষি খাত, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া সম্মানী ও দোকান এবং অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়াকে নিজের আয়ের উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে বর্তমান এমপি ডা. সামিল উদ্দীন আহমেদ শিমুল ও সাবেক এমপি গোলাম রাব্বানি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে বর্তমান সংসদ-সদস্য (এমপি) ডা. সামিল উদ্দীন আহমেদ শিমুল এবং সাবেক এমপি গোলাম রাব্বানির সম্পদের ছড়াছড়ির তথ্য মিলেছে। তাদের হলফনামা পর্যালোচনা করে এমন সব তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. সামিল উদ্দীন আহমেদ শিমুল প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। তখন তার নগদ অর্থ ছিল ছয় লাখ ৫১ হাজার টাকা এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা অর্থের পরিমাণ তিন লাখ ১০ হাজার টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেওয়া তার হলফনামা অনুযায়ী-পাঁচ বছর আগে স্ত্রীর হাত শূন্য থাকলেও বর্তমানে ১২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা রয়েছে। এমপি শিমুলের অর্থ ফুলেফেঁপে হয়েছে ১৮ গুণ। তার অর্থের পরিমাণ ৫৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা। আগে তাদের দুজনের বন্ড, ঋণপত্র বা শেয়ারে অর্থ লগ্নি ছিল না। তবে পাঁচ বছর পর সেই খাতে শিমুলের লগ্নি এক লাখ ৮০ হাজার টাকা আর স্ত্রীর ১৬ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে ব্যাংকে রয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা।
আগে ব্যবসা থেকে আয় না থাকলেও এবার শিমুলের আয় সাড়ে ৬৩ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। ভাতা ও চিকিৎসা পেশা থেকে বার্ষিক আয় ২৫ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। এছাড়া মৌসুমী ব্যবসা থেকে আয় দেখানো হয়েছে ৬৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। আগে নির্ভরশীলদের কোনো আয় না থাকলেও এবার সাত লাখ ৬৪ হাজার টাকা আয় দেখানো হয়েছে।
আগের দুটি জিপ গাড়ির মূল্য ছিল ১৮ লাখ টাকা। এবার গাড়ি দুটির দাম ১ কোটি ছয় লাখ ৩৬ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। এবার ৬০ হাজার টাকা দামের ১৫ তোলা সোনা দেখানো হয়েছে। আগে স্ত্রীর নামে ১৫ তোলা স্বর্ণের দাম দেখানো হয়েছিল সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ তোলায়। আগে স্থাবর সম্পত্তি হিসাবে যৌথ মালিকানার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ছিল।
বর্তমানে ২২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা মূল্যের ১৫৭০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন শিমুল। এতে অগ্রিম পরিশোধ করেছেন তিন লাখ ৩৫ হাজার টাকা। আগে না থাকলেও চলতি হলফনামায় স্বামী-স্ত্রীর নামে রয়েছে ৯ লাখ ৩১ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি। আগে কোনো ঋণ না থাকলেও এবার তিনি ঋণ দেখিয়েছেন ১২ লাখ টাকা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের টিকিটে গোলাম রাব্বানি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাননি। এবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। কানসাট বিদ্যুৎ আন্দোলনের নেতা রাব্বানির আগে কৃষি খাতে আয় ছিল দুই লাখ ২৫ হাজার টাকা।
নগদ অর্থ ছিল এক লাখ টাকা, স্ত্রীর নামে তিন লাখ এবং নির্ভরশীলদের নামে ছিল ৫০ হাজার টাকা। দুই লাখ টাকার দামের ৫০ ভরি স্বর্ণ ছিল স্ত্রীর নামে। এছাড়া ৭০ হাজার টাকা দামের ১০ ভরি স্বর্ণ ছিল দুই কন্যার নামে। কৃষি জমির পরিমাণ ছিল সাত বিঘা। রাব্বানি কৃষি খাতের আয় দেখিয়েছেন চার লাখ ৫০ হাজার টাকা।
কৃষি খাতের আয় ছাড়া তিনি আর কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসনের সংসদ-সদস্য (এমপি) আনোয়ার হোসেন হেলালের আয় ও সম্পদ বেড়েছে কয়েকগুণ। ২০২০ সালে ইস্রাফিল আলম এমপি করোনায় মারা গেলে উপ-নির্বাচনে মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল এমপি নির্বাচিত হন। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। মাত্র তিন বছরে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে কয়েকগুণ। সঙ্গে বেড়েছে তার স্ত্রী, প্রথম পুত্র রাহিদ সরদার, দ্বিতীয় পুত্র রাফিউল ইসলাম, কন্যা আইরিন সুলতানা রূপার সম্পদও। শূন্য থেকে তারা এখন কোটিপতি। ২০২০ সালে উপ-নির্বাচন ও ২০২৩ সালের হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণে এ এসব তথ্য উঠে এসেছে।
হলফনামায় হেলাল স্বশিক্ষিত ও পেশা ব্যবসা উল্লেখ্য করেছেন। এবারের হলফনাময় তিনি আয়ের উৎস হিসাবে সংসদ-সদস্য হিসাবে সম্মানী ভাতা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী আমানতের সুদ ও ব্যবসা উল্লেখ করেছেন। তার স্ত্রী ও তিন সন্তানও আয়ের উৎস হিসাবে ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী আমানতের সুদ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। এসব উৎস থেকে এমপি হেলালের বার্ষিক আয় ৬৭ লাখ ৩৮ হাজার ৪৭৭ টাকা। ২০২০ সালের হলফনমায় তিনি বার্ষিক আয় ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ৪৭৭ টাকা উল্লেখ করেছিলেন। এমপি হওয়ার পর আড়াই বছরের ব্যবধানে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে প্রায় পাঁচগুণ।
২০২০ সালে উপ-নির্বাচনের হলফনামায় ছেলে রাহিদ সরদারের কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল না। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৯১ লাখ ৪৮হাজার ৮৩২ টাকা। তার ৫০ ভরি স্বর্ণালংকার উল্লেখ করলেও মূল্য উল্লেখ করা হয়নি। ব্যাংকে নগদ জমা রয়েছে ২ কোটি ৮১ লাখ ২৬ হাজার ৬৫৮ টাকা।
২০২০ সালের উপ-নির্বাচনের হলফনামায় এমপি হেলালের মেয়ে আইরিন সুলতানা রূপার কোন স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল না। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ২ লাখ ৩৯হাজার ৭৬৩ টাকা। এছাড়াও তার স্বর্ণালংকার রয়েছে ৩০ ভরি। বর্তমান ব্যাংকে নগদ জমা রয়েছে ১ কোটি ১০ লাখ ১২ হাজার ৩৪৬ টাকা।
২০২০ সালের সালের উপ-নির্বাচনের হলফনামায় হেলালের দ্বিতীয় ছেলে রফিউল ইসলাম রফির কোনো স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল না। বর্তমানে তার সম্পদ ৮৪ লাখ ২৩ হাজার ৫৬২ টাকা।
সম্পদ বৃদ্ধির কারণ হিসাবে এবারের হলফনামায় আয়ের উৎস উল্লেখ করেন, সংসদ সদস্য হিসাবে সম্মানী ভাতা ও অন্যান্য খাত থেকে ২৫ লাখ ৯ হাজার ৪৪৬ টাকা। ব্যবসা থেকে পেয়েছেন ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার ৪৯২ টাকা, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতের সুদ থেকে আয় ২ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ টাকা। এই মিলে তার বার্ষিক আয় ৬৭ লাখ ৩৮ হাজার ৪৭৭ টাকা টাকা। ২০২০ সালে নির্বাচনের সময় দাখিল করা হলফনামায় বাড়ি থেকে দুইলাখ ১০হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে ১১ লাখ ৯৬ হাজার ৪১০টাকা, শেয়ার-সঞ্চয়পত্র থেকে ৮ হাজার ৩০৫ টাকা বার্ষিক আয় হতো হেলালের।
২০২৩ সালে হেলাল তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে হলফনামা দাখিলের সময় নগদ ৫ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার ৪৩৬ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ৯ লাখ ১১ হাজার ১৮৮ টাকা। কোম্পানির শেয়ার ৩০ লাখ টাকা। সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে ৩৪ লাখ ৫৮ হাজার ৬০৬ টাকা। ৯২ লাখ টাকার একটি গাড়ি, ৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকার স্বর্ণ। এছাড়াও ৫ লাখ ১১ হাজার আসবাবপত্র ও ১২ লাখ টাকার একটি পিস্তলের কথা উল্লেখ করেছেন। ২০২০ সালের উপ-নির্বাচনে হলফনামা দাখিলের সময় অস্থাবর সম্পদ হিসাবে নগদ ছিল ৪ কোটি ৭৯ লাখ ৭৬ হাজার ৩১৭ টাকা। ৫ লাখ টাকার মূল্যের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী। ৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকার মূল্যের স্বর্ণালংকার ও  ৩ লাখ টাকার আসবাবপত্র ছিল। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা  কোনো অর্থ জমা ছিল না।
বর্তমানে এমপি হেলালের স্থাবর সম্পদের মধ্যে ৫০ বিঘা কৃষি জমি। যার মূল্য ধরা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। ৩০ লাখ ৯৮ হাজার ৪৩৩ টাকা মূল্যের একটি মৎস্য খামার রয়েছে তার। রানীনগরে একটি ইটভাটা, একটি ৩ তলা বাসা, নওগাঁ শহরে একটি ৪ তলা বাসা, ঢাকার মোহম্মদপুরে রয়েছে একটি ফ্লাট ও ৭ শতাংশ জমি। যার মূল্য ১ কোটি ৩৯ হাজার ৯৮ লাখ ৪৫০ টাকা। ২০২০ সালে নির্বাচনে হলফনামা দাখিলের সময় স্থাবর সম্পদ ছিল ৩০ লাখ টাকা মূল্যে কৃষি জমি এবং বসতবাড়িসহ ৬০ লাখ টাকার সম্পদ।২০২০ সালে ব্যাংক ঋণ ছিল ১ কোটি ৭১ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪ টাকা। এখন নেমে ৯ লাখ টাকা হয়েছে।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের (২০০৮ সাল) হলফনামায় খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা উল্লেখ করা হয়। তবে বর্তমানে তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৯ কোটি ৫ লাখ ১২ হাজার ৬৯ টাকা; যা ২০০৮ সালের তুলনায় ৮৬ গুণের বেশি। আর এ ১৫ বছরের ব্যবধানে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে ১৫৭ গুণের বেশি।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার) আসন থেকে এবারও সংসদ-সদস্য প্রার্থী নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার। এই আসন থেকে পরপর তিনবার সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ২০১৮ সালে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হয়ে খাদ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।
সাধন চন্দ্র মজুমদার তার হলফনামায় বরাবরই পেশা হিসাবে ব্যবসা ও কৃষি উল্লেখ করেন। এবারের হলফনামায় আয়ের উৎস হিসাবে তিনি সংসদ-সদস্য ও মন্ত্রী হিসাবে সম্মানি ভাতা, কৃষি খাত, ব্যাংকে স্থায়ী আমানতের সুদ, অংশীদারি কারবার (ঠিকাদারি), ব্যবসা ও অন্যান্য উৎস উল্লেখ করেছেন। এসব উৎস থেকে বর্তমানে তার বাৎসরিক আয় ৩ কোটি ৯৪ লাখ ২৩ হাজার ২৫৬ টাকা। ২০১৮ সালের হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় উল্লেখ করেছিলেন ২ কোটি ২৭ লাখ ৯৬ হাজার ৬১৮ টাকা। মন্ত্রী হওয়ার পর ৫ বছরের ব্যবধানে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে প্রায় দুই গুণ। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী সাধন চন্দ্র মজুমদারের বার্ষিক আয় ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ১৫ বছরের ব্যবধানে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে ১৫৭ গুণের বেশি।
মন্ত্রী হওয়ার পর পাঁচ বছরে সাধন চন্দ্র মজুমদারের সম্পদ বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী ওই সময় তার মোট স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মূল্য ছিল ৩ কোটি ২৩ লাখ ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। এবার দাখিল করা হলফনামায় মোট সম্পদমূল্য উল্লেখ করেছেন ৯ কোটি ৫ লাখ ১২ হাজার ৬৯ টাকা। আর ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের সময় দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী ওই সময় তার মোট স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মূল্য ছিল ১০ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা। এই হিসাবে ১৫ বছরের ব্যবধানে সাধন চন্দ্র মজুমাদারের সম্পদ বেড়েছে ৮৬ গুণের বেশি।
সম্পদ বৃদ্ধির কারণ হিসাবে এবারের হলফনামায় আয়ের উৎস হিসাবে খাদ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, সংসদ-সদস্য ও মন্ত্রী হিসাবে সম্মানি ভাতা পেয়েছেন ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। কৃষি খাত থেকে পেয়েছেন ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে পেয়েছেন ৫ লাখ ৩৪ হাজার ২৭৩ টাকা। শেয়ার-সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানতের সুদ ও অংশীদারি কারবার (ঠিকাদারি) থেকে আয় হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এছাড়া অন্যান্য উৎস থেকে আয় হয়েছে ১৪ লাখ ৭১ হাজার ৯৮৩ টাকা। এই মিলে তার বার্ষিক মোট আয় হয়েছে ৩ কোটি ৯৪ লাখ ২৩ হাজার ২৫৬ টাকা। ২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় দাখিল করা হলফনামায় কৃষি খাত থেকে ২৫ হাজার টাকা ও ব্যবসা থেকে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা বাৎসরিক আয় হতো সাধন মজুমদারের।
এবার সাধন তার অস্থাবর সম্পদের মধ্যে হলফনামা দাখিলের সময় নগদ ছিল ৫ কোটি ৮৮ লাখ ৯৫ হাজার ৭১৩ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা টাকা ১২ লাখ ২৮ হাজার ৩৬৫ টাকা। সঞ্চয়পত্র, স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ২ কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫৯ টাকা। হলফনামায় নিজের দুটি গাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এগুলোর আর্থিক মূল্য তিনি উল্লেখ করেননি। এছাড়া প্রায় ৬ লাখ টাকা মূল্যমানের আসবাবপত্র ও স্বর্ণালংকার রয়েছে তার। ২০০৮ সালের নির্বাচনে হলফনামা দাখিলের সময় অস্থাবর সম্পদ হিসাবে নগদ ছিল ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ছিল ২০ হাজার টাকা। ৯০ হাজার টাকা মূল্যমানের স্বর্ণালংকার ও আসবাবপত্রও ছিল।
বর্তমান খাদ্যমন্ত্রীর স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৫০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের কৃষিজমি এবং ৪৫ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩২ টাকা দামের অকৃষি জমি।
২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের কৃষিজমি এবং বসতবাড়িসহ ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি ছিল তার।
লালমনিরহাট-৩ আসনে সংসদ নির্বাচনকালে নগদ টাকা ছিল ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭৩ টাকা। পাঁচ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ লাখ ৮৮ হাজার ২৫৩ টাকা। দলটির সাবেক সাবেক মহাসচিব ও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ রংপুর-১ আসনের এমপি মশিউর রহমান রাঙ্গার নগদ অর্থের পরিমাণ গত পাঁচ বছরে প্রায় ১৬ গুণ বেড়েছে। একইসঙ্গে জমিসহ স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে তার। ২০১৮ সালে তার হাতে নগদ ছিল ২৭ লাখ ৮ হাজার ৫৪৬ টাকা। পাঁচ বছরে নগদ অর্থ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ২৪ লাখ ৬ হাজার ৬২৮ টাকা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনুর কাছে নগদ টাকা ছিল ৬ লাখ ৮৫ হাজার। এখন তার কাছে নগদ আছে ৩ কোটি ৫৬ লাখ ১৫৫ টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরের ব্যবধানে তার নগদ টাকা বেড়েছে প্রায় ৫২ গুণ। কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে এমপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের গত ১০ বছরে তার সম্পদ বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। তবে সম্পদের বিপরীতে তার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ
রয়েছে প্রায় চার গুণ। হানিফ তার হলফনামায় বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেখিয়েছেন ১০২ কোটি ৮৬ লাখ ১১ হাজার ৭০০ টাকা।
রাজনীতির উদ্ভব মানবসভ্যতার বিকাশ এর সাথে সাথে রাজার রাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার মধ্যে দিয়ে ঘটেছে ও পরিপূর্ণতা লাভ করেছে, রাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা এবং রাজনৈতিক কলা কৌশল ও পরবর্তীকালের আধুনিক রাজনীতির শ্রেণী বিভাজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানমূলক চিন্তাধারার উত্থান ঘটিয়েছে। মেকিয়াভেলী রচিত “The Prince” গ্রন্থটি রাজতন্ত্রের চরিত্র ও স্থায়ীত্ব নিয়ে বলিষ্ঠ বিশ্লেষণ করেছে । রাজনীতি হলো এককথায় এক বিশেষ রাজত্ব কেন্দ্রিক নীতি বা রাজার নীতি এটি একটা বিশেষ চেতনা বা আদর্শ ।
এই আইনপ্রনেতাদের ভোটার কিংবা জনগণের আস্থা অর্জন করতে হলে তাদেরকে নিয়োগ বানিজ্য, টেন্ডারবাজী, জমিদখল, খাদ্যগুদাম, জলমহল, বালুমহল, ঘুষবানিজ্য পরিহার করে সৎভাবে রাজনীতি করতে হবে।  জনসাধারন সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে, বয়স্ক, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক সমাজের সাথে সুন্দর ব্যবহার করতে হবে।  ওই সব এমপি মন্ত্রীগণ মরার পর অর্থসম্পদ তো কবরে নি যেতে পারবেন না কারন কাফনের তো পকেট নেই। অনেক গরীব দুঃখি মানুষ তাদের বেকার ছেলে মেয়েদের চাকুরীর জন্য জমি, গরু, ছাগল সোনার গয়না বিক্রি করে তাদের ১০ থেকে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকুরী নামের সোনার হরিনটি ধরেছেন। যা পত্রপত্রিকায় খবর বের হয়েছে। তারা চাকুরি  পেয়ে তাদের জন্য দোয়া তো দূরের কথা অভিশাপ দিয়ে থাকেন। আর যদি ঘুষ ছাড়া চাকুরী দিত তা হলো তাদের পিতা মাতা নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহ নিকট প্রার্থনা করতেন। ফলে তারা এ দুনিয়ায় শান্তি পেত, পরকালে নাজাত পেতেন।  নেশাগ্রস্থ, দলবাজ, চাঁদাবাজ শ্রেণীর কিছু লোক চাকুরী পেয়েছেন যারা এমপি মন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে ঠিকভালে দায়িত্ব পালন করেন না। সপ্তাহের পর সপ্তাহের পর সপ্তাহ কর্মক্ষেত্রে অনুউপস্থিত থেকে মাস শেষ বেতনভাতা গ্রহন করে থাকেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে,  অফিসে তারা নিজে বস মনে করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ড. শাহ কামালের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। শুক্রবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে তার বাসা থেকে এসব দেশি ও বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। তবে অভিযানে কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। গত শুক্রবার রাতে ডিএমপির জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় বাবর রোডের এফ ব্লকের ২৯/২ ও ৩ নম্বর বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় বাংলাদেশি টাকা ও বিদেশি মুদ্রা। অভিযানে নগদ ৩ কোটি ১ লাখ ১০ হাজার ১৬৬ টাকা, ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা মূল্যের ১০০ টাকার প্রাইজবন্ড এবং ১০ লাখ ৩ হাজার ৩০৬ টাকা মূল্যমানের বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করা হয়েছে। বিদেশি মুদ্রার মধ্যে রয়েছে-৩ হাজার মার্কিন ডলার, ১ হাজার ৩২০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত, ২ হাজার ৯৬৯ সৌদি রিয়াল, ৪ হাজার ১২২ সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার, ১ হাজার ৯১৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার, ৩৫ হাজার কোরিয়ান ইউয়ান ও ১৯৯ চীনা ইউয়ান মুদ্রা। এখন যেসব এমপি, মন্ত্রী, মেয়র, প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, আওয়ামীলীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা, পাতিনেতা যারা বিগত ১৬ বছর লুটপাট করে অবৈধ কাল টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন, তাদের বাড়ী, দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করলে বেরিয়ে আসবে কোটি কোটি টাকা ও বিদেশী মুদ্রা। এগুলি উদ্ধার করে সরকারী কোষাগারে জমা দিলে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগকে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে প্রধান ভূমিকা পালন করেছেন  সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে বিধি অনুযায়ী নিরপেক্ষ ভূমিকায় থাকার কথা থাকলেও উচ্চপর্যায়ের প্রশাসনে দলীয় কর্মীর মতোই ভূমিকা রেখেছেন তারা। ১৬ বছরের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ব্যবস্থা স্বৈরতান্ত্রিক বা কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল মূলত দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার। ব্যাপক আকার পেয়ে দুর্নীতি, বাড়তে বাড়তে গোটা ব্যবস্থাকেই গ্রাস করেছে। আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হয়ে পড়েছে দুর্নীতির সুরক্ষাদাতা। এক পর্যায়ে সরকারসংশ্লিষ্টরাও বুঝে যান, কোনো কারণে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হলে তার মূল্য তাদের জন্য মারাত্মক হবে। এ প্রজন্ম ও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী তুর্কিদের কাছে এ সংক্রান্ত বহু তথ্য আছে। সেই বিবেচনায় সময়ের এবং দেশের প্রয়োজনে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি তালিকা করা  ও প্রকাশ মোটেই কঠিন কাজ নয়। দেশে আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসনী, হোসেন শহীদ সারওয়াদি মত রাজনীতিবিদদের বড্ড অভাব। ওই সব লুটপাটকারীদের সম্পদ বাজাপ্ত করে সরকারী কোষাগারে জমা ও তাদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত বিচার করা হলে দেশ  আদর্শ নেতা,  দেশ উন্নতির চরম শেখরে পৌঁছে যাবে ইনসাল্লাহ।
লেখক : মোঃ হায়দার আলী
সাধারণ সম্পাদক,
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি,
গোদাগাড়ী উপজেলা শাখা,
প্রধান শিক্ষক, মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়
গোদাগাড়ী, রাজশাহী।
মোবাইল নং ০১৭৪৫৫৩২২২২
১৮/০৮/২০২৪ইং

সর্বশেষ - মতামত