শনিবার , ২৪ আগস্ট ২০২৪ | ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

এবার ট্রাম্পের সামনে কমলার দেয়াল

Paris
আগস্ট ২৪, ২০২৪ ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির তিন দিনব্যাপী ন্যাশনাল কনভেনশন শেষ হলো। এর মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দলটির পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হলেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তিনি ও তাঁর বেছে নেওয়া ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী টিম ওয়ালজ আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন ট্রাম্প-জেডি জুটির বিরুদ্ধে। বিষয়টি আগে থেকেই অনুমিত ছিল।
কমলা তাঁর প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয়সংখ্যক প্রতিনিধির সমর্থনের প্রতিশ্রুতি অর্জন করে ফেলেছিলেন এবং প্রচারণাও চালিয়ে আসছিলেন। এই ন্যাশনাল কংগ্রেসে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব কেবল তাঁকে মনোনীতই করলেন না, প্রশংসায়ও ভাসিয়েছেন। বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটন, ন্যান্সি পেলোসির মতো দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা তাঁকে দৃঢ়চেতা, বিজ্ঞ এবং সুবক্তা হিসেবে অভিহিত করে আগামী দিনের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে কার্যকর নেতৃত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করেন।ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের মধ্যে দ্বিধা অনেক।
কট্টর একজন মার্কিনপন্থী—এটি দোষের পর্যায়ে পড়ে না। তাঁর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তিনি কিছুটা অস্থির ও বদমেজাজি। রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা কম, দেশের মৌলিক সমস্যা সমাধানে তাঁর দূরদর্শিতা নিয়ে রয়েছে বিস্তর প্রশ্ন। তার পরও রিপাবলিকান শিবিরে তিনি এই মুহূর্তে সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা।
আর এর মধ্য দিয়েই বোঝা যাচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দলটির রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন এবং নেতৃত্বের বিকাশ সে রকম গড়ে ওঠেনি। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে চার বছরের জন্য কেউ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলে পরবর্তী মেয়াদেও তাঁর জয়লাভ অনেকটা সহজ হয়ে যায়। নিকট অতীতে এর ব্যতিক্রম ঘটেছিল ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এবং এর বেশ কিছুটা সময় আগে ১৯৯২ সালে জর্জ এইচ বুশের সময়ে। এ ছাড়া আরো কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে, তবে সহসা এ রকমটা ঘটে না। এবারের নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্ষেত্রেও হয়তো এমনটা ঘটতে পারত, তবে এই সম্ভাব্য অঘটনের লাগাম টেনেছেন তিনি নিজ থেকেই।
পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে দল থেকে মনোনীত হয়েও পরবর্তী সময়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন এবং তাঁর রানিং মেট কমলা হ্যারিসকে এই পদের জন্য সুপারিশ করেন। আর সঙ্গে সঙ্গেই যেন এই নির্বাচনটিকে ঘিরে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার ঘটে। ইতিহাসের অন্যতম প্রাণহীন নির্বাচনটি পরিণত হতে যাচ্ছে অন্যতম প্রাণবন্ত নির্বাচনে। বাইডেনের তুলনায় জনমত জরিপে ট্রাম্প তিন-চার পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে থাকলেও কমলা হ্যারিস প্রচারণা শুরুর পর থেকে ক্রমেই এই ব্যবধান কমতে থাকে এবং বর্তমানে সুস্পষ্ট ব্যবধানে তিনি ট্রাম্পের তুলনায় এগিয়ে রয়েছেন।এবার ট্রাম্পের সামনে কমলার দেয়াল কমলা হ্যারিসের ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্য। নিজেকে অনেক পরিশ্রমের মাধ্যমে আজকের এই অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অল্প বয়সে মা-বাবার বিচ্ছেদের পর কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করতে হয়েছে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে একদা কানাডা এবং পরবর্তী সময়ে আবারও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ফিরে এসে পড়াশোনা ও কাজ—একাধারে এই দুটিই চালিয়ে যেতে হয়। সে সময়ের এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য হয়ে পরিবারের যৎসামান্য আয়ের সঙ্গে নিজের কাজের আয়কে যুক্ত করে সংসার চালাতে হতো। তিনি বেশ কয়েক বছর কাজ করেছেন ফাস্ট ফুড কম্পানি ম্যাকডোনাল্ডসে, যেখানে তিনি মার্কিন মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর দুর্দশার চিত্র নিজের চোখে দেখেছেন। সাম্প্রতিক নির্বাচনী প্রচারণাগুলোতে তাই তিনি এসব অভিজ্ঞতার বিষয়কে তুলে ধরে নিজের জীবন থেকে দেখা এবং শেখা অভিজ্ঞতা দিয়ে আগামী দিনে মার্কিন জনগণের জীবনযাত্রার পরিবর্তনে কাজ করবেন বলে অঙ্গীকার করছেন। নির্বাচনে তাঁর রানিং মেট হিসেবে বেছে নিয়েছেন মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজকে, যিনি সাম্প্রতিক সময়ে ডেমোক্রেটিক রাজনীতির একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি হচ্ছে তিনি তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা দিয়ে রিপাবলিকান অধ্যুষিত রাজ্যটিতে ডেমোক্রেটিক শিবিরের ঝাণ্ডা ওড়াতে সক্ষম হয়েছেন। এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মিনেসোটা মার্কিন রাজনীতিতে একটি অন্যতম সুইং স্টেট হিসেবে পরিচিত। ১২ বছর ধরে এই রাজ্যটিতে ডেমোক্র্যাটরা সামান্য ব্যবধানে জয়ী হয়ে আসছে, যার অন্যতম কৃতিত্ব টিমের। এবারের নির্বাচনে তাঁকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে অন্তর্ভুক্তির মধ্য দিয়ে এই রাজ্যটি এবং সঙ্গে প্রতিবেশী কয়েকটি রাজ্যের ভোটারদের প্রভাবিত করার একটি প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। কারণ গ্রামের ভোটারদের মধ্যে টিমের একটি বিশেষ প্রভাব রয়েছে এবং তিনি খুব সহজে তাঁদের কাছে পৌঁছতে পারেন।অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেছে নেওয়া রানিং মেট জেডি ভেন্স অনেকটা ট্রাম্পের মতোই, মধ্যবিত্ত সমাজের কাছে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা খুব একটা বেশি নেই। তবে এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের জন্য জেডিকে বেছে নেওয়ার প্রধান কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী শ্রমিক শ্রেণির সঙ্গে তাঁর সখ্য, সংযোগ স্থাপন এবং তাদের উৎসাহিত করতে বিশেষ দক্ষতার জন্য। ওহাইও অঙ্গরাজ্যের সিনেটর জেডি তাঁর স্মৃতিকথা বিষয়ক বইয়ে করপোরেট সংস্কৃতি কিভাবে রাজনীতি এবং বিশ্বদর্শনকে প্রভাবিত করে, সেগুলো তুলে ধরেছিলেন; যেখানে শ্রমিক শ্রেণির বৈষম্যের অনেক বিষয় উঠে এসেছে। আর এর মধ্য দিয়ে তিনি মার্কিন রাজনীতিতে অনেকটা পরিচিত হয়ে ওঠেন। ট্রাম্পের এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় যুক্তি হচ্ছে, এর আগেরবারের নির্বাচনে তাঁর বিখ্যাত স্লোগান ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ দিয়ে জয়ী হয়ে কাজ শুরু করলেও নির্ধারিত চার বছর মেয়াদে এ ক্ষেত্রে খুব একটা সফলতা দেখাতে পারেননি, উপরন্তু বিভিন্ন বাণিজ্য জোট থেকে সরে আসা, বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্কে লাগাম টানা এবং এসবের বিপরীতে মূলধারার মার্কিনদের জন্য নতুন কোনো বিকল্প হাজির করতে পারেননি। এসব কারণে উপলব্ধি করতে পারছেন যে মোট ভোটারের একটি বড় অংশ, যারা গ্রামীণ এবং নিম্ন আয়ের, তাদের কাছে পৌঁছতে হলে তাঁকে সে রকম কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বৈশ্বিক দর্শন অর্থাৎ বিশ্বরাজনীতিতে মার্কিন আধিপত্যকে ধরে রাখতে তাঁরা কী ধরনের ব্যবস্থা নেবেন। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বিশ্বরাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে মার্কিন জনগণ কিছুটা ধারণা পেয়েছে তাঁর কার্যকাল পর্যবেক্ষণে। তাঁর সম্পর্কে সবচেয়ে বড় অভিযোগটি হচ্ছে মার্কিন প্রভাবকে তিনি সে রকমভাবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরার পরিবর্তে রাশিয়ার পুতিনকে অনেক বেশি শক্তিশালী করেছেন এবং রাশিয়ার আধিপত্যবাদকে বিস্তৃত হতে দিয়েছেন। ২০১৬ সালে তাঁর নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে পুতিনের পরোক্ষ প্রভাব ছিল বলে জোর গুঞ্জন রয়েছে মার্কিন রাজনীতিতে। বাইডেন এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে পশ্চিমা শক্তিগুলোকে একত্র করতে সক্ষম হয়েছেন এবং রুশ আধিপত্যকে খর্ব করতে এখন পর্যন্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কমলা হ্যারিস তাঁর প্রশাসনে কাজ করছেন। সেই সূত্রে বলা যায়, নির্বাচিত হলে তিনি বাইডেন প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতাকেই অক্ষুণ্ন রাখবেন। এ ক্ষেত্রে অবশ্য বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা নিয়ে মার্কিন সমাজে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করলেও ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে এ বিষয়ে বাইডেন প্রশাসনের গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর পরিবর্তে নতুন কোনো বক্তব্য নেই; যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে আগামী দিনে যে প্রশাসনই আসুক না কেন, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না।

বাস্তবিক অর্থে মার্কিন প্রশাসনে ভাইস প্রেসিডেন্টের ভূমিকা খুব একটা আলোচিত না হলেও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাছাই খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এই কারণে যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর যে সীমাবদ্ধতাগুলো ভোটের ক্ষেত্রে এককভাবে সমাধান করা সম্ভব নয়, সেগুলোকে অতিক্রম করতে এমন কাউকে বাছাই করা, যাঁর মধ্য দিয়ে একটি জুটি তাঁদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন। এ  ক্ষেত্রে ট্রাম্প ও কমলা দুজনই তাঁদের রানিং মেট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন বলা যায়। তার পরও আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না, নির্বাচনে আসলে চূড়ান্ত ফল কী হতে যাচ্ছে। এর আগে ২০১৬ সালে ট্রাম্প যখন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, নির্বাচনের আগের প্রায় প্রতিটি জনমত জরিপেই তিনি হিলারির চেয়ে পিছিয়ে ছিলেন এবং তিনটি প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কের প্রতিটিতেই তিনি হিলারির কাছে কুপোকাত হয়েছিলেন। এর পরও দেখা গেল মোট ভোটে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও প্রাপ্ত ইলেকটোরাল কলেজের হিসাবের জেরে হিলারি পরাজিত হলেন। এ ঘটনায় অনেকেই এমনও ধারণা করেছিলেন যে মার্কিন জনগণ আসলে তাদের প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনো নারীকে দেখতে এখনো প্রস্তুত নয়। বিষয়টি কি আসলেই এ রকম কি না, সেটি এক হিলারির পরাজয়ের মধ্য দিয়ে পরীক্ষিত নয়, তবে কমলার জন্য চ্যালেঞ্জিং বটে, কেননা তিনি দ্বিতীয় নারী হিসেবে এক ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে এই পদের জন্য নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। তবে যদি এই পরীক্ষায় তিনি সফলভাবে উত্তীর্ণ হন, তাহলে নিশ্চয়ই এটিও বলা যাবে যে তিনিই শেষ নন, বরং একটি অধ্যায়ের সূচনা করলেন।

লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

mfulka@yahoo.com

 

সূত্র: কালের কণ্ঠ

সর্বশেষ - মতামত