রবিবার , ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পবার বড়গাছী বাজারে চলছে দোকানঘর নির্মাণ ও বরাদ্দ

Paris
সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩ ৯:৫৫ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজশাহীর পবার উপজেলার বড়গাছি হাটে সরকারী জায়গায় দোকানঘর নির্মাণ চলছে। গত ২৮ আগষ্ট উচ্চ আদালত থেকে বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত এই হাটের দোকানঘর নির্মাণ ও বরাদ্দের উপর নিষেধাজ্ঞাজারী করা হয়। কিন্তু হাটের সভাপতি সম্পাদক আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা দোকানঘর নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে।

এতে ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তবে জেলা প্রশাসক বলছেন উচ্চ আদালতের রায়ের কপি আমরা পেয়েছি। আদালত যেভাবে নিদের্শনা দিয়েছেন সেভাবেই আমরা কাজ করা হবে।

জানা গেছে, এই হাটের দোকানঘর নির্মাণ ও বরাদ্দের ব্যাপারে এক ব্যবসায়ীর মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ দেয়া হয় রাজশাহী জেলা প্রশাসক বরাবর। পরে মামলাটি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এরই সূত্র ধরে উচ্চ আদালত গত ২৮ আগষ্ট বড়গাছি হাটের সরকারী জায়গার উপর দোকানঘর নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞাজারী করেন। উচ্চ আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মিসেস শাহলা শরাতাত নেজাদ শুনুর সমন্বিত রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে এ নিষেধাজ্ঞাজারী করা হয়।

এই সাথে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসককে নিদের্শ দেয়া হয়। আদেশে বলা হয়, রাজশাহীর পবার বড়গাছি হাটের দোকানপাট নির্মাণ ও বরাদ্দ কেনো অবৈধ নয়, জানতে চেয়ে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে। এরপরও আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওই হাটের সভাপতি সম্পাদক দোকানঘর নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন।

এব্যাপারে পবার বড়গাছি বাজার কমিটির সভাপতি এমদাদুল হকের সাথে কথা বলতে তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, পবার বড়গাছি হাটের দোকানঘর নির্মাণ বিষয়ে উচ্চ আদালত যে নিষেধাজ্ঞাজারী করেছেন সেটি আমাদের কাছে এসে পৌঁছেছে। আদালত যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা সেভাবে কাজ করবো।

উল্লেখ্য, এ হাটে মহিলা বিপণী কেন্দ্রের ইজারাদার সালেহা বেগম দোকানঘরটি না ভাঙ্গার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দেন। মূলত বর্তমান চেয়ারম্যান ইজার চুক্তি ভঙ্গ করে এই দোকানঘরটি ভেঙ্গে ফেলছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বাজার কমিটির সভাপতি ও যুবলীগ নেতা এমদাদ ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছেন এমন অভিযোগও রয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মফিজুর রহমানের স্ত্রী সালেহা বেগমকে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার গত ২০০৪ সালে বড়গাছি বাজারে নির্মিত মহিলা বিপণি কেন্দ্র নামে দোকানটি ইজারা নেন। ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর পর্যন্ত চুক্তিকৃত ইজারা মূল্যে ভাড়া ৩০০ টাকা পরিশোধ করা হয়। এরপর ৮নং বড়গাছী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সোহেল রানা গত ২০০০ থেকে ২০২১ সালে পর্যন্ত ইজারা চুক্তি পূণঃনবায়ন করে দেন। যার বার্ষিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৩৬০০ টাকা। ইজারার শর্ত মেনে দীর্ঘ ১৯ বছর যাবৎ সততার সাথে ব্যবসা পরিচালনা করে করছেন ব্যবসায়ী সালেহা বেগম।

কিছুদিন আগে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও বড়গাছী বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতির মাধ্যমে জানতে পারেন বড়গাছী মহিলা বিপণী কেন্দ্রটি ভেঙ্গে নতুনভাবে ঘর নির্মাণ করে ইজারা প্রদান করা হবে। ওখানে মোট ছয়টি দোকান ঘর করা হবে। এই দোকানঘর ভাঙ্গা হলে সালেহা বেগমসহ অন্যরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এছাড়াও পুনরায় ইজারা না পান তাহলে এই নারী ব্যবসায়ীর রুজি রোজগার অনিশ্চিত হবে।

এদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকারি নিয়ম না মেনে, হাটে স্থায়ী পাকা দোকানঘর নির্মাণ, বরাদ্দের নামে টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। এতে প্রকৃত ব্যবসায়ী বঞ্চিত হচ্ছেন। অনেকটা স্বজন প্রীতির মাধ্যমে হাটের জায়গা নিয়ে বাণিজ্য করছেন বাজার কমিটির লোকজন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ এসব অনিয়মে ইএনও ও এসিল্যান্ডসহ সরকারি কর্মকর্তাদের জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

সরকারি নিয়ম বর্হিভূতভাবে হাট বাণিজ্যে লিপ্ত হয়েছেন বর্তমান বাজার কমিটির সভাপতি এমদাদ ও সেক্রেটারি আফজাল। এমদাদ পবা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও তার ছেলে বড়গাছী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সাগরের প্রভাবে সরকারী খাস জায়গায় নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে, স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে, হাটের বরাদ্দকৃত জায়গা বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর