মঙ্গলবার , ২৩ মে ২০২৩ | ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

উগ্র মেজাজি রাজশাহী জেলা বিএনপি নেতা চাঁদ

Paris
মে ২৩, ২০২৩ ১২:১৫ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:

সব সময়ই উগ্র মেজাজে থাকেন রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। তাঁর দল দেড় যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকলেও একটুও মেজাজ কমেনি তাঁর। তবে গত ১৯ মে রাজশাহী জেলা ও মহানগর বিএনপির সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কবরস্থানে পাঠানোর’ হুমকি দিয়ে তিনি এখন লাপাত্তা। পুলিশ হন্য হয়ে তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।

এদিকে বার বার চাঁদের এমন কাণ্ডে বিব্রত বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। প্রধানমন্ত্রীকে কবরস্থানে পাঠানোর বক্তব্য বিএনপির দলীয় নয়, এটি চাঁদের নিজের বক্তব্য দাকি করে দলটির নেতারা বলছেন, তাঁর ওই বক্তব্য রাজনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভুত। এর জন্য তারা বিব্রত। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু তো চাঁদের পক্ষে ক্ষমাও চাচ্ছেন।

গত ১৯ মে বিকালে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলা ও মহানগর বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে চাঁদ বলেন, ‘আর ২৭ দফা ১০ দফার মধ্যে আমরা নাই। এক দফা- শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনাকে কবরস্থানে পাঠাতে হবে। শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করার জন্য যা যা করার দরকার আমরা করব।’

তাঁর এই বক্তব্যের ভিডিও গত রোববার বিকালে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। রোববার দিবাগত মধ্যরাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা আবুল কালাম আজাদ চাঁদের বিরুদ্ধে পুঠিয়া থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেন। সোমবার সকালে বিষয়টি বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লা ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকার্ট বেঞ্চে নজরে আনা হয়। এ সময় চাঁদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানতে চান হাইকোর্ট। পরে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার বিষয়টি হাইকোর্টকে জানানো হয়।

বিএনপির এই নেতা যে এবারই প্রথম প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন তা নয়। এর আগে গত বছরের ২২ জুলাই রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বারশতদিয়াড় হাবিবুরের মোড়ে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অশালীন বক্তব্য দেন চাঁদ। এর প্রতিবাদে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে তখন মামলা করা হয়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য চাঁদের বিরুদ্ধে হত্যাসহ নানা অভিযোগে দুই ডজনেরও বেশি মামলা এখন চলমান। কিছুদিন আগেই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। সুযোগ পেলেই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের বিষেদগার করে বক্তব্য দেন। ছাড়েন না নিজ দলের নেতাদেরও।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন আবু সাঈদ চাঁদ। ওই নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পান প্রয়াত নেতা কবির হোসেন। এর প্রতিবাদে চাঁদ সমর্থকদের নিয়ে মিছিল বের করেছিলেন। মিছিলটি নিয়ে চারঘাট থেকে রাজশাহী শহরে আসার পথে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকেই ‘কালো পতাকা’ দেখিয়েছিলেন তিনি। এটি খালেদা জিয়াকে ‘হত্যার হুমকি’ হিসেবে মনে করেছিলেন দলীয় নেতারা।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাঘা-চারঘাটে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান চাঁদের নেতৃত্বেই জ¦ালাও-পোড়াও আন্দোলন হয়েছে। রেললাইন উপড়ে ফেলা এবং ট্রাকে আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বিএনপি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলে সময় চাঁদ তাঁর শলুয়া এলাকায় ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দেননি। শলুয়ার একটি ভোটকেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি হয়েছিল শূন্য। ২০১৫ সালের ৫ মে চাঁদের নেতৃত্বে পুঠিয়ার বানেশ^র বাজারে পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। এই সংঘর্ষের ভেতরে পড়ে এক ব্যক্তি মারা যান। এই ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলারও আসামি চাঁদ। কিছুদিন আগে তিনি এ মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

এবার প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন সারাদেশে প্রতিবাদ করছে। চাঁদকে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হচ্ছে। এ দাবিতে সোমবার বিকালে রাজশাহী নগরীর রানীবাজার থেকে মহানগর আওয়ামী লীগ একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এতে নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।

বিভিন্ন সময় দেওয়া নির্বাচনি হলফনামায় চাঁদ নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা লেখেন এসএসসি পাস। তবে তাঁর এই শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক কোন শিক্ষা আবু সাঈদ চাঁদের নেই। তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক, তাঁর বক্তব্য খুবই খারাপ। প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে তার আরেকবার হত্যার ইঙ্গিত দিয়ে কথা বলা আওয়ামী লীগ শক্তভাবে দেখছে।’

তবে এটি চাঁদের ব্যক্তিগত বক্তব্য বলে দাবি করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। তিনি বলেছেন, চাঁদের এই বক্তব্যের কারণে তাঁরা বিব্রত। এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন। মিজানুর রহমান মিনু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক মঞ্চে বক্তব্য দিতে গেলে এ ধরনের “স্লিপ অব টাংক” হয়ে যায়। আমাদেরও এ রকম হয়। আমরা সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করে দিই। দরকার হলে সংবাদ সম্মেলন করে ভুল সংশোধন করি, ক্ষমা চাই। চাঁদ এটা মিস করেছে। তাঁরও সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন আনা উচিত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘চাঁদের বক্তব্য আমাদের দলের কথা নয়। এ ধরনের বক্তব্য না দেওয়ার ব্যাপারেই আমাদের দলের নির্দেশনা। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাই, শুধু এই বক্তব্যই দেওয়ার কথা আমাদের। কিন্তু চাঁদ আবেগপ্রবণ ছেলে। সে জন্য হয়তো এ ধরনের কথা বলে ফেলেছে। তার বড় ভাই হিসেবে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। তার হয়ে ক্ষমা চাইছি সবার কাছে।’

তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি চাঁদের ব্যক্তিগত বক্তব্য নয়। বিএনপি যা ভাবে, ছাত্রদল-যুবদল সব সময় যা ভাবে, সেটি তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। তিনি অশিক্ষিত মানুষ, কীভাবে কথা বলতে হয় তা জানেন না। তাই বলে কোন ছাড় নয়। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আরও মামলা হবে। আমরা আবু সাঈদ চাঁদকে রাজপথেই মোকাবিলা করব। তাঁকে যদি পুলিশ গ্রেপ্তার না করে তাহলে কীভাবে গ্রেপ্তার করাতে হয় সেটিও দেখব।’

জানতে চাইলে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফারুক হোসেন বলেন, ‘আবু সাঈদ চাঁদকে গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা চলছে। তিনি বাড়িতে নেই। বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। কোথাও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তিনি লুকিয়ে থাকতে পারবেন না। গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই তাকে গ্রেপ্তার করা যাবে।’

স/আর

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর