সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:
সিলেট স্টেডিয়ামে প্রথমবার ওয়ানডে ম্যাচ খেলতে নেমেই জয়ের ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৮ উইকেটে জিতে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানেডে ট্রফি নিজেদের করে নিল মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বাধীন ক্রিকেট দল।
এর আগে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করে সাকিব আল হাসানের বাহিনী। আগামী সোমবার সিলেটের এই ভেুন্যতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হবে।
শুক্রবারের এই জয়ের মধ্য দিয়ে এক বছরে সবচেয়ে বেশি (২০টি) ওয়ানডে জয়ের রেকর্ড গড়ল টাইগাররা। চলতি বছরে এনিয়ে ৪১টি ম্যাচ খেলে ২০টিতে জয় পায় বাংলাদেশ। এর আগে ২০০৬ সালে ৩৩ ম্যাচে ১৯টিতে জয় পেয়েছিল টাইগাররা।
প্রথমে ব্যাট করে শাই হোপের সেঞ্চুরিতে ৯ উইকেটে ১৯৮ রান সংগ্রহ করে উইন্ডিজ। টার্গেট তাড়া করতে নেমে তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের জোড়া ফিফটিতে ৬৯ বল হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ দল।
সৌম্যর ফিফটি
সবশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামে গত ২৬ অক্টোবর সেঞ্চুরি (১১৭) করেন সৌম্য সরকার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চলমান ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে প্রস্তুতি ম্যাচে বিকেএসপিতে সেঞ্চুরি (১০৩) করেন জাতীয় দলের এই তারকা ক্রিকেটার।
প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করা সৌম্য মূল ম্যাচে খেলতে নেমে সুবিধা করতে পারেননি। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই খেলায় ১৯ ও ৬ রানে ফেরেন সৌম্য। আগের দুই ম্যাচে প্রত্যাশিত ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ সৌম্য শুক্রবার সিলেট স্টেডিয়ামে তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের সপ্তম ফিফটি।
তামিমের ৪৪তম ফিফটি
আগের ম্যাচে মিরপুরে ৫০ রান করেন তামিম ইকবাল। তবে তার ফিফটির ম্যাচে হেরে যায় বাংলাদেশ দল।
শুক্রবার সিলেটে আরও একটি ফিফটির ইনিংস খেলেন দেশসেরা ওপেনার। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৮৬তম ম্যাচে ৪৪তম ফিফটি করেন তামিম। একদিনের ক্রিকেটে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করা এই ওপেনার ১১টি সেঞ্চুরিও হাঁকিয়েছেন।
মারলন স্যামুয়েলসকে লং অফের উপর দিয়ে ছক্কা হাঁকান সৌম্য সরকার। আর এই ছয়ের মধ্য দিয়ে ১০০ ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ দল।
সিরিজ জয়ে ১৯৯ রানের টার্গেটে ব্যাট করছে বাংলাদেশ দল। উদ্বোধনীতে ৪৫ রানের জুটি গড়ে সাজঘরে ওপেনার লিটন কুমার দাস। আগের ম্যাচে ৮ রান করা লিটন এদিন ফেরেন ২৩ রানে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৯৮/৯
উপলক্ষের শেষ নেই। ওয়ানডেতে অভিষেক হয়েছে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এটি মাশরাফি বিন মুর্তজার ২০০তম ওয়ানডে। আসলে ২০২তম। তবে বাকি দুটি জাতীয় দলের হয়ে নয়, আফ্রো-এশিয়া কাপে; এশিয়া একাদশের হয়ে।
এ ম্যাচ দিয়ে হাবিবুল বাশারকে ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে টাইগারদের সবেচেয়ে বেশি ম্যাচে (৭০টি) নেতৃত্ব দেয়ার নজির গড়েছেন ম্যাশ। দেশের মাঠে সম্ভবত এটিই তার শেষ ম্যাচ। এটি জিতে ক্যাপ্টেনকে শিরোপা উপহার দিতে চান সাকিব-মুশফিক-তামিম-মাহমুদউল্লাহরা। এজন্য তাদের দরকার ১৯৯ রান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে দাপুটে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। তবে মিরপুরে পরের ম্যাচেই ধরা খায় স্বাগতিকরা। ফলে অঘোষিত ফাইনালে পরিণত হয় তৃতীয় ওয়ানডে। সেই লড়াইয়ে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে বোলিং নেন টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি। শিশির ফ্যাক্টর মাথায় রেখে এ সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তার সিদ্ধান্তকে যৌক্তিক প্রমাণ করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। শুরুতেই সাফল্য এনে দেন তিনি। মোহাম্মদ মিঠুনের তালুবন্দি করে চন্দ্রপল হেমরাজকে ফিরিয়ে দেন এ অফস্পিনার।
পরে ড্যারেন ব্রাভোকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠেন শাই হোপ। ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দারুণ খেলছিলেন তারা। ক্রিজে জমাট বেঁধে যাচ্ছিলেন এ জুটি। তবে বাদ সাধেন সেই মিরাজ। ব্রাভোকে সরাসরি বোল্ড করে ফেরান তিনি। তাতে ভাঙে ৪২ রানের জুটি।
তৃতীয় উইকেটে মারলন স্যামুয়েলসকে নিয়ে এগিয়ে যান হোপ। ভালোভাবেই দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন তারা। তবে হঠাৎই ছন্দপতন। খেই হারান স্যামুয়েলস। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে ইনসাইড এজ হয়ে ফেরেন তিনি। এদিন রুবেল হোসেনের পরিবর্তে একাদশে অন্তর্ভুক্ত হন সাইফ। আস্থার প্রতিদানও দেন। এতে পথ হারায় সফরকারীরা।
সেই চাপের মধ্যে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে শিমরন হেটমায়ারকে ফেরান মিরাজ। এ নিয়ে ষষ্ঠবার তাকে আউট করার নজির স্থাপন করেন তিনি। এতেই ক্ষ্যান্ত হননি এ অফস্পিনার। ক্যারিবীয়দের স্পিন বিষে নীল করে ছাড়েন মিরাজ। খানিক বাদে মুশফিকুর রহিমের তালুবন্দি করে রোভম্যান পাওয়েলকে ফিরিয়ে তাদের বিপর্যয়ে ফেলেন তিনি।
এ পরিস্থিতিতে সৌম্য সরকারের ক্যাচে পরিণত করে রোস্টন চেজকে ফিরিয়ে দেন সাকিব আল হাসান। এতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর মধ্যে ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে তুলে নেন তিনি। তবে এতে তার যতটা অবদান,এর চেয়ে বেশি ফিল্ডার মোহাম্মদ মিঠুনের। স্কয়ার লেগে অসাধারণ ক্যাচে অ্যালেনকে ড্রেসিংরুমের পথ ধরান তিনি।
সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি সফরকারীরা। ধারাবাহিক বিরতিতে মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরেন কিমো পল। সেই রেশ না কাটতেই তার শিকারে পরিণত হন কেমার রোচ। তিনি ফেরেন এলবিডব্লিউ শিকার হয়ে। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৯৮ রান করে অতিথিরা। ১০৮ রানে অপরাজিত থাকেন হোপ। অপরপ্রান্তে ৬ রানে অপরাজিত থাকেন দেবেন্দ্র বিশু।
এদিন উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা নিয়মিত বিরতিতে যাওয়া-আসার মধ্যে যোগ দিলেও একপ্রান্ত আগলে রাখেন হোপ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে লড়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি। এ নিয়ে ব্যাক টু ব্যাক তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন এ ওপেনার। শেষ পর্যন্ত ১৩১ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় হার না মানা ১০৮ রান করেন তিনি।
বাংলাদেশের সেরা বোলার মিরাজ। স্পিন বিষ ছড়িয়ে ক্যারিয়ারসেরা বোলিং করে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ২টি করে উইকেট ঝুলিতে ভরেছেন মাশরাফি ও সাকিব।