সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :
ভূমিহীন যারা, তারাও এ মাটির পৃথিবীতেই বিচরণ করে, আবার ভূমির দাবি ও দখলের জন্য আপনজনের ভূমিকায় অন্তরের নীরব উচ্চারণ—‘মাটি কেন দুই ভাগ হয় না’! মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই সব ভূমি আল্লাহর, তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তার অধিকার দান করেন।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১২৮)
ভূমি অর্থে বোঝায় পৃথিবী, ভূপৃষ্ঠ, মাটি, মেঝে, জমি, ক্ষেত, দেশ ইত্যাদি। পবিত্র কোরআনে মাটির প্রতিশব্দ ‘তুরাব’ ও ভূপৃষ্ঠের তথা পৃথিবীর প্রতিশব্দ বলা হয়েছে ‘আরদ’। মালিকানা ও ভোগদখলের দৃষ্টিতে ভূমি চার প্রকার। যেমন—
১. আবাদি ও মালিকানাধীন ভূমি : কৃষিকাজ, বসবাস, দোকানপাট, পুকুর, শিল্পকারখানা ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত। এ ভূমি মালিকেরই অধিকারভুক্ত।
২. অনাবাদি ভূমি : কারো মালিকানাধীন হওয়া সত্ত্বেও তা অনাবাদি। অর্থাৎ চাষাবাদ বা কোনো কাজে ব্যবহৃত হয় না। এ ভূমিও মালিকের অধিকারে থাকবে।
৩. জনকল্যাণে নির্দিষ্ট ভূমি : প্রাকৃতিক জলাশয়, বন, চারণভূমি, কবরস্থান, মসজিদ, ঈদগাহ ইত্যাদিতে সর্বসাধারণের অধিকার আছে।
৪. পরিত্যক্ত ভূমি : ইসলামের পরিভাষায় এ ধরনের জমি ‘আল-মাওয়াত’ বা মালিকানাশূন্য অনাবাদি ভূমি হিসেবে পরিচিত এবং এগুলো সরকারি সম্পত্তি। যেমন—পাহাড়ি ভূমি, মরুভূমি, জলাভূমি, বনভূমি ইত্যাদি।
প্রিয় নবী (সা.) ও খলিফাদের যুগে কয়েকটি উপায়ে ভূমি ইসলামী রাষ্ট্রের মালিকানায় আসে। যেমন—
অনাবাদি পতিত জমি। আগে থেকেই রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে নির্ধারিত। মুসলমানদের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ভূমি এবং অমুসলমানদের মালিকানাধীন ভূমি।
ইসলামের উৎপাদনমুখী ভূমি ব্যবস্থাপনায় উপযোগ অনুযায়ী ভূমি ব্যবহারের নির্দেশনা আছে। প্রিয় নবী (সা.) ও খলিফাদের যুগে কয়েকটি উপায়ে ভূমি ইসলামী রাষ্ট্রের মালিকানায় আসে। যেমন—
অনাবাদি পতিত জমি। আগে থেকেই রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে নির্ধারিত। মুসলমানদের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ভূমি এবং অমুসলমানদের মালিকানাধীন ভূমি। ইসলামের উৎপাদনমুখী ভূমি ব্যবস্থাপনায় উপযোগ অনুযায়ী ভূমি ব্যবহারের নির্দেশনা আছে।
মালিক যে-ই হোক, তা যেন অনাবাদি না থাকে, তা নিশ্চিত করা জরুরি। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের যার জমি আছে সে যেন তাতে চাষাবাদ করে, যদি নিজে না করতে চায় তবে যেন অন্য ভাইকে জমিটি চাষ করার জন্য দান করে।’
শুধু উর্বরা ভূমিতে ফসল করার নির্দেশনা দিয়েই ইসলাম ক্ষান্ত হয়নি, বরং প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মৃত (অনুর্বর) ভূমিকে জীবিত করবে সেটির মালিক হবে সে নিজে।’
এভাবেই ইসলাম বিরান ভূমিকে ফসল উৎপাদনের আওতায় এনে খাদ্যসংকট থেকে বাঁচার পথ দেখায়।
হাদিস গ্রন্থসমূহে ‘আল ইকতা’ নামের একটি অধ্যায় আছে, অর্থ ভূমি বরাদ্দ। দেশের পরিত্যক্ত ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রয়োজনাতিরিক্ত ভূমি ভূমিহীনদের মধ্যে বরাদ্দের বিধান আছে ইসলামে। সুনানে আবু দাউদে একজন সাহাবি বলেছেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে প্রিয় নবী (সা.) রায় দিয়েছেন যে জমি-জায়গা সব কিছু আল্লাহর এবং মানুষ মাত্রই আল্লাহর বান্দা। অতএব, যে ব্যক্তি অনাবাদি জমি আবাদযোগ্য করে তুলবে সে-ই তার মালিকানা লাভের অধিক যোগ্য হবে।’
অন্যের ভূমি অন্যায়ভাবে দখলে নেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। কেউ কারো জমি অন্যায়ভাবে দখল করলে তা বৈধতা পাবে না। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কারো এক বিঘত পরিমাণ জমিন জোর করে দখল করেছে, কিয়ামতের দিন তার গলায় সাত তবক পরিমাণ জমিন বেড়িরূপে পরিয়ে দেওয়া হবে।’
জমির আইল ঠেলা বা হেরফের ঘটাতেও প্রিয় নবী (স.) কঠোরভাবে নিষেধ করে বলেন, ‘যে ব্যক্তি জমির আইল পরিবর্তন করে তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক।’
ইসলাম জীবনের জন্য জীবিকার তাৎপর্য স্বীকার করে। মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ও বঞ্চনার জন্য দায়ী সুষম বণ্টনব্যবস্থা, মানুষের দায়িত্ব সচেতনতার অভাব ও কর্মবিমুখিতা ইত্যাদি। সম্পদের সুষম বণ্টন প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনের নীতি হলো—‘তাদের সম্পদে দরিদ্র ও বঞ্চিতদের অধিকার আছে।’
(সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ১৯)
মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ইসলামে ‘ওশর’ (মুসলমানের ফসলি কর) একটি বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন ফসল পাকে, তখন তা খাও এবং ফসল কাটার দিন তা থেকে আল্লাহর হক দুস্থজনের হক) আদায় করো।’ (সুরা : আন-আম, আয়াত : ১৪১)
তিনি আরো বলেন, ‘যা আমি তোমাদের জমি থেকে উৎপাদন করেছি, তা থেকে পবিত্র (উত্তম) অংশ খরচ করো।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৬৭)
বস্তুত উৎপাদনমুখী ও সম্প্রীতির সমাজ বিনির্মাণ ইসলামের বিঘোষিত নীতি।
(লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ কাপাসিয়া, গাজীপুর)
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন