শুক্রবার , ২১ জুন ২০২৪ | ২৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর
NBIU Spiring 2025 New Ad

আনিফ রুবেদের গল্প । হৃৎপিণ্ডের পরিধি

Paris
জুন ২১, ২০২৪ ৭:৪৭ অপরাহ্ণ


মঈন আমাদের গল্পের ভেতর প্রবেশ করবে এখন।

[সে হেঁটে আসছে অনাদিকাল থেকে। তাকে বহু মানুষ বহু যুগে বহুবার দেখেছে। কিন্তু দেখেনি। দেখিয়ে না দিলে মানুষ দেখতে পায় না, দেখতে চায় না। এজন্যই তো এসব গল্প বলা উঠেছে, ইতিহাস বলা উঠেছে জগতে। গল্পচশমা ছাড়া মানুষ মানুষকে দেখতে পায় না, ইতিহাসচশমা ছাড়া মানুষ মানুষকে দেখতে পায় না। যদি দেখতে পেত, তবে এসব গল্পের দরকার থাকত না, ইতিহাসের দরকার থাকত না।]


হ্যাঁ, মঈন আমাদের গল্পের ভেতর প্রবেশ করছে। মঈনের মুখমণ্ডল প্রবেশ করল গল্পের ভেতর। মুখে তার হাজার হাজার বছরের তাপের ছাপ, চাপের ছাপ। বিষ গিলে গিলে নীল হয়ে আছে। চোখের ভেতর দৃশ্য-ধুলোর আস্তরণ। কিছু দৃশ্য পিঁচুটি হয়ে বেরিয়ে চোখের কোণ দখল করে আছে। পিঁচুটিরা চুপচাপ বসে আছে নিরুপদ্রবে। অন্য সকল মানুষের চোখে থাকা পিঁচুটিদের উপদ্রবের ভেতর থাকতে হয়। অপাগল মানুষ পিঁচুটি পছন্দ করে না, আঙুল দিয়ে ঘষে ঘষে খুলে ফেলে। মঈনের নাকের ভেতর বাতাসেরা ঢুকবে কিনা তার সিদ্ধান্ত নেবার জন্য সভা করছে। বাতাস সভার সভ্যদের সিদ্ধান্ত নেবার আগেই কিছু বাতাসকে তার ভেতর ঢুকে যেতে হচ্ছে। মঈনের নাক দড়ি দিয়ে বেঁধে সভা করতে থাকা বাতাসদের দুএকজনকে টেনে নিচ্ছে। ফলে, বাতাসেরা তাদের পরনের কাপড়-চোপড় বা প্রসাধন গুছিয়ে নিতে পারছে না, একেবারে অপ্রস্তুতভাবে মঈনের ফুসফুসের রমণে অংশ নিতে বাধ্য হচ্ছে।

এবার গল্পের বুকে মঈনের বুক প্রবেশ করবে। বুক প্রবেশ করল। লোমশ বুক। চওড়া বুক। বুকের তলে হৃৎপিণ্ড আছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। থাকলেও সে হৃৎভাণ্ড হয়ত তার কাজ চুপচাপ করছে। মানুষের হৃৎপিণ্ডের অনেক কাজ কিন্তু মঈনের হৃৎখণ্ডের রক্তের আদান প্রদান করা ছাড়া কোনো কাজ নেই। তার হৃৎপিণ্ডের কাজ অনেকগুলোই কমে গেছে। ব্যথা পেয়ে রক্তের নাচন নাই। সুখ পেয়ে রক্তের উল্লাস নাই। তার হৃৎপিণ্ডে হৃদয় যেন নেই। সুখ-দুঃখের বাইরে হৃদয় অনাথ হয়ে বসে আছে।

শরীরে থাকা অঙ্গগুলোর মধ্যে সবচে বেশি আদিমতা জানে পেট। এবার মঈনের পেট গল্পের পেটে ঢুকে গেল। এখন তার পেট চালানোর দায়িত্ব এ গল্পের।

যারা একটু বেশি লাজুক তারা এবার চোখ বন্ধ করুন। কারণ, এখনি এই গল্পের ভেতর প্রবেশ করবে মঈনের শিশ্ন। তার স্বাভাবিক আকৃতির আর প্রকৃতির শরীর ও শিশ্ন। আমিও চোখ বন্ধ করলাম, কারণ, আমিও বেশ লাজুক। নগ্নতা সহজভাবে দেখতে পারি না। এখন তার শিশ্ন বেরিয়ে আসবে। গল্পের শরীরে তার শিশ্ন প্রবেশ করবে ধীরে ধীরে। তার শিশ্ন বেরিয়ে থাকার বয়সও প্রায় তিন বছর। গল্পের ভেতর তার শিশ্ন প্রবেশ করল। শিশ্নের চোখ একটা কিন্তু কাজ দুটো। একটা কাজ রেচনের আর একটা কাজ রচনের। তিনবছর থেকে তার শিশ্নের জননদৃষ্টি বা রচনদৃষ্টি বন্ধ আছে। শুধু রেচনদৃষ্টি খোলা। কেউ শত ইচ্ছে করলেও তার রেচনচোখ বন্ধ রাখতে পারে না।

এবার গল্পের মুখের ভেতর মঈনের পা প্রবেশ করবে। হাঁটন্ত পা। এগিয়ে আসছে গল্পের মুখ বরাবর। তার পাগল পা প্রবেশ করল। মঈন গল্পের মুখে পা ঢুকিয়ে দিল। গল্পের মুখে পা ঢুকাতে গল্পের কিছুই হলো না। বরং গল্পই তাকে গিলে নিল।

গল্পের ভেতর সে বসল। এভাবে সে বসে বেড়ায়, এভাবে সে হেঁটে বসে।


সে তিন বছর থেকে এই ছোট শহরের বড় রাস্তা লাগোয়া একটা ফুটপাতের চায়ের দোকানের পাশে বসে আছে। নগ্ন হয়ে মগ্ন মনে বসে আছে। মাঝে মাঝে এদিক ওদিক গেলেও এখানেই ফিরে আসে। এটা স্থায়ী ঠিকানা।

মঈন বসে আছে তার আটত্রিশ বছরকে কোলে নিয়ে। এবং সে বসে আছে তিন বছর ধরে।

তার বয়স তিন বছর আগে আটত্রিশ ছিল। এখনো তার বয়স আটত্রিশ। তার বসে থাকার বয়স বাড়ছে। তার বয়স বাড়ছে না। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তার বয়স বাড়বে না। তার বসে থাকার বয়স বাড়বে।

মঈনের গল্পের ভেতর প্রবেশ শেষ হয়েছে, এবার গল্প বলা শুরু হবে। এ গল্প এখনই মাত্র বলা শুরু হচ্ছে এমন নয়। এ গল্পের বয়স তিনশ বছর, তিন হাজার বছর, তারো বেশি বছর, মানুষবছর। মানবকাল থেকেই এ গল্প শুরু হয়ে আছে, গল্প এগুচ্ছে কিন্তু শেষ হচ্ছে না। গল্পের শেষের শেষে অশেষ বাস করে।


তার বসে থাকার বয়সটা আরো বেশি হতে পারত। হতে পারত চার বা সাড়ে চার বছর। কিন্তু তা হয়নি। এক্ষেত্রে সে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে বলা যায়। কিন্তু তার ধৈর্যের বয়স একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে যখন তরুণ হয়ে গেল, হৃদয়ের ভার যখন করুণ হয়ে উঠল তখন মঈনের ধৈর্য্য মঈনকেই আর আমলে নিল না। মঈনের ধৈর্য মঈনেরই দেয়া দেয়াল ভেঙ্গে বলেই ফেলল— ‘দেখ পরিধা, শিশ্ন আর যোনির অত্যাচারে প্রেম পালিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী ছেড়ে, শিশ্ন আর যোনির তাড়া খেয়ে প্রেম পালিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী ছেড়ে।’তার বসে থাকার বয়স এখন তিন হলে তার মুখ দিয়ে বের হওয়া এই কথার বয়স তার চেয়ে বছরখানেকের বেশি। একথার সত্যতার বয়স মঈনের বয়সের চেয়েও বেশি।

মঈনের কথাটি শুনে পরিধা বিস্ময়ে তার দিকে তাকায় আর ঘরে থাকা আয়নাতে তার নিজের চেহারা দেখে বোঝার চেষ্টা করে, তার নিজের মুখের উপর একথা লেখা আছে কিনা। সে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আতশি কাচে দেখার মতো করে দেখে। না দেখতে পেয়ে, সে অন্য ঘরে গিয়ে আতশি কাচ দিয়ে তার ঠোঁটে, গালে, বুকে, যোনিতে কোথাও একথা লেখা আছে কিনা তাও ভাল করে দেখে। এরকম কোনো লেখা সে দেখতে পায় না তার শরীরের কোথাও। অন্য ঘর থেকে ফিরে এসে বলে— ‘তুমি একথা বলছ কেন? আমি তো একথা শোনার কোনো কারণ দেখি না।’

মঈন আর কিছু বলে না। গাছেরা সবসময় চুপ করে থাকে। কখনো কখনো কোনো কোনো মানুষ গাছের মতো হবার চেষ্টা করে। মঈনও জানালার বাইরে চোখের দৃষ্টিকে পাঠিয়ে দিয়ে একটা গাছের গা থেকে সামান্য পরিমান ‘চুপ করে থাকা’টেনে নেয়। গাছ থেকে নেয়া চুপটুকু মুখে পরে নেয়। মুখে ‘চুপ’পরে, চুপ করে থাকে।

পরিধা যখন দেখল, গাছের গা থেকে ‘চুপ করে থাকা’নিয়ে মঈন নিজের মুখে মাস্কের মতো করে পরে নিয়েছে তখন পরিধা তার কথাকে এসিডে পরিণত করে আর মঈনের চুপমাস্কের উপর নিক্ষেপ করে— ‘চুপ করে আছ কেন, বলো, কেন এমন বলছ?’ পরিধার কথার এসিডে মঈনের চুপমাস্ক গলে গেলে সে মুখ খুলে— ‘পরিধা, আমরা কি প্রেম করে বিয়ে করিনি?’ পরিধার মুখ ফ্যাকাসে হয় মুহূর্তেই, কিন্তু মুহূর্তের জন্য। সে নিজেকে সামলে নেয় আর বলে— ‘তোমাকে এভাবেই থাকতে হবে।’ কিন্তু এভাবে না থেকে মঈন মাঝে মাঝেই তাকে বলে ফেলে— ‘শিশ্ন আর যোনির অত্যাচারে, শিশ্ন আর যোনির তাড়া খেয়ে প্রেম পালিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী ছেড়ে।’ আর কখনো কখনো বলে— ‘আমরা কি প্রেম করে বিয়ে করিনি?’ আর পরিধার কাছে শুনতে থাকে— ‘তোমাকে এভাবেই থাকতে হবে।’


পরিধাও ধৈর্য ধারণ করেই ছিল। এই কথা শুনতে শুনতে বিরক্ত হতে হতে সে প্রায় ছমাস পার করে দেয়। এ ছয়মাসেই তার ধৈর্য একটু একটু করে বড় হতে হতে ডাঁশা হয়। ডাঁশা থেকে পেকেও যায়। পেকে যাবার পর যদি পচে যেত তবে একটা ব্যাপার ঘটত কিন্তু সেটা না পচে ফেটে গেল এবং যখন মঈন বাড়িতেই থাকে তখন একদিন বাসেদ এলো।

মঈন বাসাতে থাকা অবস্থায় বাসেদ আসে না বা কম আসে। এলেও মঈনের সাথেই কিছুক্ষণ বসে থাকে, চা খায় আর চলে যায়। তার ভাবটা এমন থাকে যেন, পরিধাকে সে ভালো করে চেনেই না, তার সাথে সে কখনো তেমনভাবে কথাই বলেনি। যেন পরিধার দেহের পরিধি সম্পর্কে তার ধারণা নাই। অথচ পরিধার পরিধি-বেধ-ব্যাস সব তার জানা, পরিধার দেহজ্যামিতির ত্রিভুজ আর বৃত্ত বৃত্তান্ত সব তার মুখস্ত।

কিন্তু এবার সে এলো এবং প্রথমেই পরিধার ঘরে গেল। তারা কিছুক্ষণ কথা বলল। কথা বলা হলে, তারা দুজনেই এসে মঈনকে মারতে শুরু করে আর বাড়ি থেকে বের করে দেয়। মঈনকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে তারা বেডরুমে ঢুকে প্রতিদিনের মতো। কিন্তু পার্থক্য হলো এখন ঘড়িতে, সূর্যে যতটা বাজছে ততটার সময় কোনোদিন বেডরুমে যায়নি। এ সময়টাতে মঈন বাসাতেই থাকে।


যেহেতু নারী নির্যাতনের মিথ্যে মামলা দিলেও নারীর জেতার সম্ভাবনা বেশি থাকে সেহেতু জিতে যায় পরিধা। জ্ঞানীরা চক্ষু বাড়াতে বলেন। আনারসের গায়ে প্রচুর চোখ আছে, তবে আনারস একটা জ্ঞানী ফল এবং প্রাণীদের মধ্যে জ্ঞানী প্রাণী হলো মাছি জাতীয় পতঙ্গ।

মঈনের বাবা-মা তাদের জীবন খাটা শেষ করে মঈনকে জীবন খাটতে দিয়ে চলে গেছিল। কষ্ট করে স্কুল-কলেজ পাশ করে মঈন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এরপর, পরিধার সাথে তার পরিচয়। পরিধা তাকে প্রেমের কথা বলে। মঈন প্রথম দিকে ‘তুমি অনেক ধনির মেয়ে’বলে পরিধার প্রেমপ্রস্তাবনাকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করে। কিন্তু পাশটা সম্ভবত খুব কঠিন ছিল। সে পাশটাকে কাটতে পারেনি। ফলে, তাদের প্রেম হয়, বিয়ে হয়।

বিয়ে হবার পর তারা একটা ভাড়া বাড়িতে থাকতে থাকে।

পরিধার সাথে বিয়ে হবার পর পরিধা তাকে বলেছিল— ‘তুমি তোমাদের বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে চলে আসো, চলো গিয়ে উঠি আমাদের বাড়িতেই।’এ সিদ্ধান্ত নিতে মঈন দুবছর পার করে দেয়। কিন্তু পরিধার মা বাবাও যখন মারা গেল তখন আর পরিধার জোরের কাছে না করতে পারেনি। সে বাড়িটা বিক্রি করে টাকাগুলো ব্যাংকে রেখে পরিধাদের বেশ বড় বাড়িটিতে এসে উঠে। এরপর, আরও তিনবছর পার হলে বাসেদ কারেন্ট মিস্ত্রিরূপে অবতার হয়ে চলে আসে। সে ধীরে ধীরে প্রবেশ করে মঈন আর পরিধার মাঝখানে। সে পরিধার ভেতর প্রবেশ করে পূর্ণাবতার হয়ে, কামাবতার হয়ে।


মঈনকে তাড়িয়ে দেবার পর, নিজেই মঈনের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করার পর, মামলাতে জেতার পর, মামলাতে ডিভোর্স নেবার পর, মঈনের বাড়ি বিক্রির সব টাকা পরিধা নিয়ে নেয়। আদালত দেনমোহর ও খোরপোশ বাবদ মঈনের টাকাকে পরিধার টাকা করে দিয়েছিল।

মামলাতে হারার পর, সব টাকা হারার পর, ফার্মের চাকরি হারার পর, বেশ কয়েকমাস জেল খাটার পর মঈন এখানে বসে আছে তিনবছর ধরে। সে যেখানে বসে থাকে সেটা বড় রাস্তার ধারের একটা ড্রেন কাম ফুটপাত। পাশেই একটা চায়ের দোকান। মঈন কারো কাছে কিছু চাই না। কেউ কেউ নিজে থেকেই তাকে বিস্কুট বা কেক খেতে দেয়।

মঈন যেখানে বসে থাকে তার ঠিক অপরপাশের দুশো মিটার বামে পরিধার বাড়ি। বাড়ির সদর দরজা আর দেয়ালজুড়ে গুলঞ্চলতা দুলে দুলে ঝুলে। গুলঞ্চ তার বাবা লাগিয়েছিল। এর ফুল সুন্দর, এর ওষধি গুণও প্রচুর। গুলঞ্চের রস পরজীবী কৃমি নিবারক। এ বাড়িতে বাসেদ প্রতিদিন আসে প্রতিদিন চলে যায়। কোনো কোনোদিন রাতে থাকে, প্রাতে যায়।

মৌনময় কাল কাটে মঈনের। যৌনময় কাল কাটে পরিধার।


হঠাৎ একদিন পরিধা, তিনবছর থেকে নগ্ন হয়ে বসে থাকা মঈনের পায়ের কাছে এসে পড়ে। সে রক্তাক্ত। সে ঘর্মাক্ত। সে হাঁসফাস করছে। তার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। সে বলে— ‘মঈন, তুমি পাগল হওনি আমি জানি, আমাকে তুমি ক্ষমা করো। আমাকে বাঁচাও, বাসেদ আমাকে মেরে ফেলবে।’ তিন বছর পর মুখ খুলে মঈন, শান্তভাবে বলল— ‘বাঁচালাম যাও।’এটুকু বলার পর সে মুখ তুলে পরিধার দিকে তাকায় আর মৃত্যুমাখা একটু হাসি দিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। হৃৎ বন্ধ করে নিল। ফুসফুস বন্ধ করে নিল। রেচন বন্ধ করে নিল। রচন বন্ধ করে নিল। বচন বন্ধ করে নিল।

মানুষজন দাঁড়িয়ে দেখতে পেল, একটা অভিজাত সুন্দরী নারী একটা পাগলের মরণমাখা শরীর জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে।

কিছুক্ষণ পর দুটা পোঁটলার দিকে পরিধার চোখ যায়। তিন বছর আগে এ পোশাক পরে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল মঈনকে। পরিধার কান্না বুক ঠেলে বেরিয়ে আসে। সে পোশাকের পোঁটলা খুলে। পোশাকে অজস্র কাগজ। এসব কাগজ ফটোকপির দোকানের আশেপাশে থেকে সংগ্রহ করা। মঈনের পোশাকের ভেতর থেকে কাগজ বের করে পড়ে পরিধা ছুঁড়ে ফেলতে লাগল। একেকটা কাগজ একেক সাইজের কিন্তু প্রত্যেক কাগজে একই কথা লেখা। প্রত্যেকটা কাগজে একই কথা লেখা আছে জেনেও প্রত্যেকটা কাগজই পড়ে সে, যদি কোনো কাগজে আলাদা কিছু লেখা দেখা যায় এই আশায়। মানুষজন কুড়িয়ে পড়ে দেখে, সব কাগজে ঐ একই কথা লেখা— ‘শিশ্ন আর যোনির তাড়া খেয়ে প্রেম পালিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে, শিশ্ন আর যোনির অত্যাচারে প্রেম পালিয়ে গেছে পৃথিবী ছেড়ে।’

পরিধা তন্ন তন্ন করে সব কাগজ একে একে পড়ল, কোনো কাগজে আলাদা কিছু লেখা দেখতে পেল না। শুধু একটা কাগজ পেল যেটা একেবারে সাদা। এটা কি সে ইচ্ছে করেই ফাঁকা রেখেছে না আজকে লিখত। নাকি পরিধার লেখার জন্য রেখেছে। এসব ভাবনা পরিধাকে পেয়ে বসে।

মৃত মঈনকে জড়িয়ে ধরে জীবিত পরিধার কান্না যারা দেখছিল, তারা হঠাৎ করে কিছুটা দূরে চেঁচামেচি শুনতে পায়। কে একজন বলল— ‘একজন লোক ট্রাক চাপা পড়েছে।’সবাই সেদিকেই ছুটতে শুরু করল। পরিধা হঠাৎ সচকিত হয়ে লোকজনের ছুটে যাবার দিকে দেখে। একজন চিৎকার করে আর একজনকে বলল— ‘লোকটা কারেন্ট মিস্ত্রি, তার নাম বাসেদ, ট্রাকে চাপা পড়ে মরেছে, মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, রাস্তা রক্তে লাল হয়ে গেছে।’

বিস্ময় নিয়ে পরিধা মঈন পাগলার দিকে তাকিয়ে থাকল। পরিধা বিস্ময়ের বলয়ে থাকতে থাকতেই পাগলা মঈনের মরা শরীরে পড়ে আবার কাঁদতে শুরু করল। পরিধার মুঠিতে ধরা সেই সাদা কাগজটা।

সাদা কাগজটা জানে না তার বুকে কখনো কিছু লেখা হবে কিনা।

অলংকরণ রাজিব রায়

Spiring 2025 New Design

সর্বশেষ - শিল্প ও সাহিত্য