বুধবার , ১৪ জুন ২০১৭ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আতঙ্কের পাহাড়ে এখন আহাজারি আর আর্তনাদ

Paris
জুন ১৪, ২০১৭ ১২:৩৪ অপরাহ্ণ

সিল্কিসিটিনিউজ ডেস্ক: স্বজনহারা মানুষের আহাজারি আর আহতদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। একের পর এক লাশ আসছে রাঙামাটি, বান্দরবানের সরকারি হাসপাতালগুলোয়, সঙ্গে ভাসছে চিকিৎসা নিতে আসা আহতদের আর্তনাদ। বাইরে শহরজুড়ে স্বজনহারাদের হাহাকার। আর বেঁচে থাকাদের মাঝে নতুন করে পাহাড় ধসের আশঙ্কা।

বান্দরবানে সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা মেলে পাহাড় ধসে আহত প্রসেন ত্রিপুরা, সূর্য চাকমা ও বীর বাহাদূর ত্রিপুরার। গতরাতের আতঙ্ক এখনও তাদের চোখেমুখে। এই পাহাড় ধসে তাদের সহপাঠী রেবা ত্রিপুরা নিহত হয়েছেন। আতঙ্ক আর বন্ধু হারানোর বেদনায় তাদের চোখে পানি। তারা জানায়, ভোররাতে হঠাৎ সব এলোমেলো হয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে। এসব কথা বলতে বলতেই কেঁপে উঠছিলেন তারা।

প্রসঙ্গত, টানা বর্ষণে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ১৩০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে রাঙামাটিতে সেনা কর্মকর্তাসহ ৯৮ জন, বান্দরবানে ৭ জন এবং চট্টগ্রামে ২৫ জন মারা গেছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সোমবার (১২ জুন) মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার (১৩ জুন) রাত পর্যন্ত এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

রাঙামাটি শহরের ভেদভেদি পশ্চিমপাড়া এলাকার খতিজা বেগম ও নূরজাহান বেগম  বলেন, ‘রাত দুইটা-আড়াইটার দিকে (সোমবার দিবাগত রাত) দেখি আমাদের বাসার নিচে মাটি সরে যাচ্ছে। আতঙ্কে সঙ্গে সঙ্গে ঘর ছেড়ে পাশের একটি বাসায় আশ্রয় নেই। কাছের আরও কয়েকটি বাড়ির লোকজন সেখানে ঠাঁই নিয়েছিল। ভোরে সেহরির কিছুক্ষণ পরেই এই বাসার ওপরেই পাহাড় ভেঙে পড়ে। এখনও সেখানে অন্তত ৬ জন নিখোঁজ রয়েছে।’

চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে এখন পর্যন্ত ২৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে প্রতিবছরই এরকম ঘটনা ঘটছে। ২০০৭ সালে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসে মারা যান ১২৭ জন। ২০০৮ সালে পাহাড় ধসে মারা যান ১১ জন। ২০০৯ ও ২০১০ সালে মারা যান ১৫ জন। ২০১১ সালে ১৭ জন মারা যান।  ২০১২ সালে মারা যান ২৩ জন। ২০১৩ সালে মারা যান ৫ জন। ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই মারা যায় ৫ শিশুসহ ৬ জন।

পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারী একাধিক বাসিন্দা জানান, তারা ভূমিহীন, যাওয়ার মতো স্থায়ী কোনও ঠিকানা তাদের নেই। আর নগরীর সাধারণ বাসা ভাড়ার তুলনায় এখানে বাসা ভাড়া অনেক কম। তাই বাধ্য হয়ে ও জেনেশুনেই তারা পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন।

তারা অভিযোগ করে জানান, প্রশাসন বিভিন্ন সময় তাদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু এসব প্রতিশ্রুতি কখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। তাই আতঙ্ক নিয়েই একপ্রকার বাধ্য হয়ে তারা এখানে বসবাস করেন।

টানা বর্ষণে বান্দরবানের কালাঘাটা এলাকায় তিনটি স্থানে পাহাড় ধসে পড়েছে। এতে তিন শিশুসহ ৭ জন প্রাণ হারিয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও ২ জন। কালাঘাটের কবরস্থানের পাশে পাহাড় ধসে রেবা ত্রিপুরা (১৮) নামের এক শিক্ষার্থী মাটি চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

এছাড়া, লেমুঝিরি আগাপাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে এক পরিবারের তিনটি শিশু প্রাণ হারিয়েছে। কুহালং ইউনিয়নের পূর্ব ধোপাছড়ি এলাকার সম্বুনিয়া পাড়ায় পাহাড় ধসে একই পরিবারের তিনজন নিহত হয়েছেন। বান্দরবান সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, জেলার দুর্গম এলাকায় অনেক জায়গায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

 

সূত্র” বাংলা ট্রিবিউন

সর্বশেষ - জাতীয়