সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক
যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুতে সড়ক যান ও রেল দুটিই চলে। তবে ধারণক্ষমতা কম হওয়ায় এ সেতু দিয়ে ট্রেন পার হয় ধীরগতিতে। একটি পার হতে আরেকটি অপেক্ষা করতে হয়। এসব বিবেচনায় সেতুর উজানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু নামে আরেকটি সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী বছরের আগস্টের মধ্যে সেতুটি ট্রেন চলাচলের উপযোগী হতে পারে।
১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুতে রেল সংযোগ চালু করে সরকার। স্বাধীনতার পর রেলওয়ের উন্নয়নে এটি মাইলফলক। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ৪৩.৭০ কিলো নিউটন/মিটার লোড বহনের অনুমতি রয়েছে। এর ফলে ট্রেন ২০ কিলোমিটার গতিতে চালাতে হচ্ছে। একটি ট্রেন পার হওয়ার পর আরেকটি ট্রেন অতিক্রম করতে হয়।
সে জন্য বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪.৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতু নির্মাণ করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। তাতে ক্রসিংজনিত কারণে আগের মতো স্টেশনগুলোয় অপেক্ষা করতে হবে না। প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, জাইকার অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে রেলওয়ে। প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে ওই অঞ্চলের রেল যোগাযোগে সময় সাশ্রয় হবে। পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারবে রেলওয়ে।
রেলসূত্র জানিয়েছে, রেলসেতুর কাজ শেষ হলে সংশ্লিষ্ট ট্রেনগুলোর রানিং টাইম ন্যূনতম ৩৫ মিনিট কমবে। ফলে রেলওয়ের পরিচালন ব্যয় কমবে এবং বাড়বে রেলওয়ের আয়। লাইন ক্যাপাসিটি বাড়ার ফলে ৩৮টি ট্রেনের পরিবর্তে ৮৮টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে। এ সেতুতে ব্রডগেজ ট্রেন ১২০ কিলোমিটার গতিতে এবং মিটারগেজ ট্রেন চলতে পারবে ১০০ কিলোমিটার গতিতে।
এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সেকশনে দেশীয় ও আন্তঃদেশীয় কনটেইনার পরিচালনার কার্যক্রম শুরু করা যাবে। তাতে বহুলাংশে বেড়ে যাবে রেলের আয়। স্বল্প সময়ে অধিকসংখ্যক ট্রেন পরিচালনার কারণে সড়কপথে চাপ কমবে। দূর হবে যানজট। এ ছাড়া সেতুতে গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন স্থাপনের ফলে জনসাধারণকে অধিকতর গ্যাস ব্যবহারের সুবিধা দিতে পারবে সরকার।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০২০ সালের ৫ এপ্রিল ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়। এরপর ২০২২ সালের ২ মে প্রকল্পের সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন ওয়ার্কের প্যাকেজের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় রেলওয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রকল্পের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নকশা অনুযায়ী সেতু নির্মাণের জন্য স্টিল পাইপ শিট পাইল (এসপিএসপি)ব্যবহার করা হয়েছে অধিক উপযোগী ফাউন্ডেশন হিসেবে। মরিচারোধে ওয়েদারিং স্টিলের সুপারস্ট্রাকচার ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে নির্মাণপরবর্তী সময়ে সেতুর মূল কাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় অত্যন্ত সীমিত।
‘ডাইরেক্ট রেল ফাস্টেনার’ স্থাপনের মাধ্যমে রেলসেতুর মূল কাঠামোর ডেড লোড কমিয়ে সিøপার স্থাপন ছাড়া সরাসরি রেল গার্ডারের সঙ্গে রেললাইনকে সংযুক্ত করা হচ্ছে। ফলে বৃহৎ এ সেতুতে সিøপার বা রক্ষণাবেক্ষণ জটিলতার সৃষ্টি হবে না। বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুতে স্থাপিত ব্রডগেজ এবং মিটারগেজের জন্য ৪টি রেলের পরিবর্তে ৩টি রেল স্থাপন করা হচ্ছে। গার্ড রেলের পরিবর্তে ডিরেলমেন্ট প্রিভেনশন গার্ড ব্যবহার করা হচ্ছে সেতুতে। এতে রক্ষণাবেক্ষণ সহজ হবে। বর্তমানে এক রেললাইনে অধিক যাত্রীবাহী এবং মালবাহী ট্রেন পরিচালনার জন্য বহুল ব্যবহৃত হেড হারডেন্ড রেল ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে রেল হেড ক্ষয়জনিত রেললাইনের পরিবর্তন দীর্ঘমেয়াদে প্রয়োজন হবে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে। তবে চুক্তি অনুযায়ী সেতুর নির্মাণকাজ ২০২৪ সালের আগস্ট নির্ধারিত আছে। নির্মাণকাজ শ ১২ মাস ধরা আছে ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড হিসেবে।