সোমবার , ৪ জুলাই ২০১৬ | ২১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

“আইএস যেভাবে আমার ব্রেনওয়াশ করে”

Paris
জুলাই ৪, ২০১৬ ১:২৭ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

পেশায় স্কুল শিক্ষক ও বেবিসিটার, ২৩ বছর বয়সী অ্যালেক্স যেদিন তার টুইটার ফলোয়ারদের জানান যে তিনি ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়েছেন সেদিন তিনি উত্তেজনায় কাঁপছিলেন।
এর আগে কয়েকমাস ধরেই তিনি অনলাইনে নতুন একদল বন্ধুর ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠছিলেন। জীবনে যত বন্ধু পেয়েছেন এরা তাদের সবার চেয়ে অনেক বেশি যত্নবান ছিল। এরা তাকে মুসলিম হওয়ার মানে কী সে সম্পর্কে শেখাতো। এরপর তারা প্রায়ই তাকে ইসলামিক স্টেট এবং কী করে সংগঠনটি সিরিয়া ও ইরাকে নিজেদের জন্য একটি আবাসস্থল তৈরি করছে এবং কী করে “পবিত্রজনরা (দ্য হলি)” সেখানে “ইশ্বরের (আল্লাহ)” আইন অনুযায়ী জীবন-যাপন করতে পারবে সেসব বলতো।
এদের একজনের নাম ফয়সাল। সারাক্ষণই তার সঙ্গে আলাপ আলোচনা করত। প্রতিদিন টুইটার, স্কাইপ এবং ইমেইলে সে তার সঙ্গে ঘন্টার পর ঘণ্টা আলাপ-আলোচনা করত। এসময় সে খুবই যত্নের সঙ্গে তাকে ইসলামি ধর্মবিশ্বাসের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জানাতো।
কিন্তু যেদিন অ্যালেক্স তাকে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে বললেন যে, তিনি ওয়াশিংটন রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে তার দাদার বাড়ি থেকে পাঁচ মাইল দুরে একটি মসজিদের সন্ধান পেয়েছেন সেদিন থেকেই তার অনলাইন বন্ধু ফয়সাল হুট করেই চুপসে যান।
অনলাইনেইর ওই একদল মুসলিম ছাড়া অ্যালেক্স বাস্তব জীবনে আর কোনো মুসলিমের দেখা পাননি। মসজিদের কথা বলার পর থেকে অনলাইন মুসলিম ফয়সাল তাকে বলতে থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। মুসলিম হয়েছে জানতে পারলে অ্যালেক্সকেও সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করা হতে পারে। আর এখন থেকে অনলাইনে তাদের আলাপ-আলোচনার বিষয়গুলোও গোপন রাখার পরামর্শ দেন ফয়সাল। এমনকি নিজের পরিবারের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা না বলার পরামর্শ দেয় ফয়সাল।
ফয়সালের পরামর্শে দুইধরনের জীবনযাপন শুরু করেন অ্যালেক্স। তিনি গির্জায় পড়ানো অব্যাহত রাখেন। কিন্তু রেডিওতে এখন আর তিনি খ্রিস্টানদের জনপ্রিয় সঙ্গীতের চ্যানেল কে-লাভ শোনেন না। এর পরিবর্তে তিনি আইফোনে আইএসআইএস এর গান শোনেন এবং জঙ্গিদের সঙ্গে জীবনটা কেমন হবে তা নিয়ে দিবাস্বপ্ন দেখা শুরু করেন।
অ্যালেক্স বলেন, “আমার মনে হচ্ছিল আমি ইশ্বর ও খ্রিস্টান ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছি। তবে অনলাইনে নতুন নতুন বন্ধু পেয়ে আমি কিছুটা উত্তেজিতও ছিলাম।”
এ সময় ইসলামিক স্টেটের আদর্শ নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে তীব্র নিন্দার ঝড় বইতে শুরু করে। এর পরেও পশ্চিমা দেশ থেকেও অনেককে তাদের দলে ভেড়ানো সম্ভব হয়। আইসিসের দলে ভেড়ানো লোকরা পশ্চিমাদের প্রোপাগাণ্ডাতে পাত্তা দিতে মানা করে।
এই বছরের জানুয়ারিতে, কমপক্ষে ১০০ অ্যামেরিকানকে প্রশিক্ষণ দেয়া হল । ইরাক , সিরিয়ার জিহাদি গ্রুপে যোগ দিলো। তাদের মাঝে,  পশ্চিমা দেশ থেকেও আরও ৪০০০ লোক তাদের দলে যোগ দিলো।
সোশ্যাল মিডিয়াতে  আইসিস তাদের লোকদের দলে ভেড়াতে শুরু করল। তাদের সংখ্যা বাড়তে লাগলো চম্পকপ্রদভাবে। সামাজিক গণমাধ্যমে ২৪ ঘণ্টা সেই সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অপারেশন চলতে থাকে। জার ফলশ্রুতিতে, অনেক আইসিস স্বেচ্ছাসেবী, সমর্থক আইসিসের খবর ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে লিপ্ত থাকত।
আলেক্সের অনলাইন গ্রুপটি জড়িত ছিল ডজনখানেক ফেইক একাউন্টের সাথে। আর কিছু মানুষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করা হতো যারা আইসিসের সাথে আছে। আলেক্সের গ্রুপটি প্রায় ছয় মাস এক হাজার ঘণ্টা ধরে কাজ করে ছিল। আইসিস তাদেরকে অর্থ দিত। চকলেট দিত। তাদের কাজে ভূয়সী প্রশংসা করত। আইসিসের সংখ্যা বৃদ্ধিতে আরও নিজেকে কাজে লাগাতে বলা হত।  একজন ক্রিশ্চিয়ান হিসেবে অ্যালেক্সকে অনেক  পুরস্কৃত করা হয়েছিল। তাকে আইসিসে ভেড়ানোর উদ্দেশে। অ্যালেক্সও নিজেকে সপে দিয়েছিলেন আরও কত উদার ভাবে আইসিসের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করা যায় ।
নিঃসঙ্গরা বিপথে যায় যেভাবে: অ্যালেক্স শহরের খুব কাছেই থাকত। তার দাদা দাদুরা চাইত নিরিবিলি পরিবেশে থাকতে। কিন্তু অ্যালেক্স চাইত কোনো দলের মাঝে থাকতে। তাদের কাছেই অ্যালেক্স ছোট থেকেই বেড়ে উঠেছে । তার বয়স যখন সবে ১১ বছর। তার মা অতিরিক্ত ড্রাগ সেবনে আসক্ত। তাকে রাখা হয়েছিল পূনর্বাসনকেন্দ্রে ।
হটাৎ তার ফোন ১৯ শে আগস্ট সিএনএন লাইভ এলার্টে কেঁপে উঠল।
জেমস ফয়েলি নামে এক অ্যামেরিকান সাংবাদিকের মাথা কেটে ফেলা হয়েছে । তা সম্প্রচার করছে । আইসিস নামে যে কিছু আছে আগে জানা ছিল না অ্যালেক্সের ।
সেই দুর্বিষহ হত্যার দৃশ্যে মনে গেঁথে গেলো । অতি আগ্রহের সাথে আরও বেশী আইসিস সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হল অ্যালেক্স । টুইটারে প্রবেশ করে দেখতে চাইলো আইসিস সম্পর্কে আর কি জানা যায় ।
“ আমি এমন কাউকে খুঁজছিলাম তাঁরা কি করা জানার জন্য । কেন তাঁরা এসব কাজ করে বোঝার চেষ্টা করছিলাম । অনলাইনে তাঁদেরকে খুঁজে পাওয়া তেমন কঠিন কাজ ছিল না ।”
অ্যালেক্স সেই মুহূর্তে ঘাবড়ে গেলো । যিনি কি না আইসিসের কর্মকাণ্ডের জন্যে চিহ্নিত সেই অ্যালেক্সের প্রশ্নের জবাব দেয় ।
“ তাঁরা যখন দেখলো আমি আইসিস সম্পর্কে জানার জন্য অনেক বেশী কৌতুহলী। তখন তাঁরা খুব বিণয়ের সাথে আচরণ করতে লাগলো । তাঁরা জানতে চাইলো আমার সম্পর্কে । আমার পরিবার সম্পর্কে । আমি কোথায় আছি । আমি জীবনে কি করতে চাই ।  ”
পরিচয়ের এক পর্যায়ে তাকে জানানো হল, তিনি  আইসিসের একজন যোদ্ধা মনজের হামাদ । সিরিয়ার কাছে  দামেস্কে থাকেন ।  ধীরে ধীরে তাঁরা অনালাইনে  চ্যাট করতে লাগলেন । ইসলাম সম্পর্কে ধারণা দিতে লাগলেন । আইফোনে ইসলাম হাব নামে আপ্লিকেশনটি ডাঊনলোড করতে বলেন। প্রতিদিন হাদিস সম্পর্কে নোটিফিকেশন আপডেট দেয় । মনজের অ্যালেক্সের কথা মন দিয়ে শুনতো । দিনের প্রায় সময় তখন অনলাইনে থাকতো অ্যালেক্স । সারাদিন আইফোন কেবল ম্যাসেজ, নোটিফিকেশন আপডেট হতে লাগলো। অ্যালেক্স কৌশলে মাঝে মাঝে জানতে চাইতো কিভাবে জিহাদিরা গলা কেটে  মানুষ হত্যা করে । কিন্তু অ্যালেক্সের মনে তখন আইসিসের প্রভাব এমনভাবে মোহবিস্ট করতে লাগলো । তখন  নিজের মনে একটা ধারণা তৈরি হয়ে গেলো যে এগুলো মিডিয়ার সৃষ্টি ।
অ্যালেক্স আল্লাহ, যীশু, বহু ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলো । চারচের ফাদারের সাথে ক্রিচিয়ান প্রিনিসিপাল নিয়ে কথা হলো । তর্ক বাঁধলো ।
কলেজ ছেড়ে দেয়ার পর , অ্যালেক্স কিছুদিন ডে কেয়ারে কাজ করল। শর্ত ভঙ্গের কারনে চাকরি ছেড়ে দিলো অ্যালেক্স । ফয়সালের সাথে অনলাইন কথোপকথনে এক মোহনীয় কথার জাদুর ফাদে পরে যায় । অ্যালেক্সের মনে গেঁথে যায় কথা গুলো । ক্রিসমাস ডে যতই কাছে আসতে লাগলো অ্যালেক্স নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারল না। ফয়সাল তাকে কলেমা পড়ায় – আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই । মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল ।  ধর্মান্তরিত হয়ে অ্যালেক্স হয়ে যান শাহাদা । টুইটারে যখন টুইট করে তখন অনেকে বিশ্বাস করতে পারে নি । হিজাব পড়তে আরম্ভ করে । ফয়সাল ও তার কিছু সহযোগীকে পরিচয় করিয়ে দেয় । আজকে থেকে তাঁরা ভাই বোন। ধর্মান্তরিত শাহাদা টুইট করে, “ অনেকে মনে করছেন আমি স্পাই হিসেবে কাজ করছি। আমি বলতে চাই আমি ৯২% নির্ভেজাল সত্য আমি ২৮ ডিসেম্বর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি । এখন থেকে আমার নাম শাহিদা । ”
পরিবারের চাপ: অ্যালেক্সের দাদীমা খুব ভোরে উঠে দেখে অ্যালেক্স জেগে আছে। ঘুমায়নি । সেই মার্চ মাস থেকে দাদুর সাথে তর্ক বাধতে শুরু হয়। একদিন খুব সকালে অ্যালেক্সে দাদীমা আইসিসের সদস্যদের সাথে অনালিনে মুখোমুখি হওয়ার চেষ্টা করেন । যে অ্যালেক্সকে নিয়োগ দিয়েছে আইসিসে । অনেক চেষ্টা চালালো আইসিসের কারো সাথে যোগাযোগ করার সম্ভব হয় নি । তারপর, অ্যালেক্সের কম্পিউটার, ট্যাব , ফোন জব্দ করল দাদীমা । আইসিস আবার তার দাদীমা সাথে কোন এক ভাবে যোগাযোগ করলো । দাদীমা কে সালাম দিলো । দাদীমা প্রতি উত্তরে জানালো ,  “ অ্যালেক্সকে আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ । তোমরা কি করে মনে করলে নিশ্চিত বিপদ জেনে এমনাবস্থায় আমি অ্যালেক্সকে তোমাদের কাছে তুলে দিব । কি মনে করো তুমি নিজেকে ? যেখানে , ২৪ বছর ক্রিসচিয়ান আদর্শে অ্যালেক্সকে গড়ে তুলেছি সেখানে তুমি তাকে ব্রেইন ওয়াশ করে তোমাদের দলে ভেড়াতে চাইছো ।    ”
ফয়সাল কিছুক্ষণ পর উত্তর দিলো , “ আমি বুঝতে পেরেছি আপনি উগ্র মুসলিম বোঝাতে কি বলতে চাইছেন । আমার অনুরধ রইল ফক্স চ্যানেলের নিউজকে বিশ্বাস করবেন না । আমরাো সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করি না । আমরা এমন কোন কাজ করি না যা আমার বন্ধুদের জন্য ক্ষতিকর  কিংবা অবৈধ ।”
অ্যালেক্সের দাদী মা অ্যালেক্সের টুঁইটার, ইমেইল , স্কাইপের পাসওয়ার্ড চাইলে বাধ্যে হন দাদীকে দিতে । অ্যালেক্সের দাদীমা  অ্যালেক্সের সব সামাজিক  মাধ্যমের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলেন ।  অ্যালেক্সের বাসায় এফবিআই এর গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন এসে অ্যালেক্সের সকল চ্যাটের তথ্য ডাউনলোড করে নিরাপত্তার বিশ্লেষণের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় সেন্টারে । অ্যালেক্সের দাদীমা অ্যালেক্সকে নিয়ে ভ্যাকেশনে বের হন । তারপর , বেশ অনেক মাস সামাজিক মাধ্যম ছেড়ে সব কিছু থেকে দূরে ছিল অ্যালেক্স । ব্রেইন ওয়াশ হয়ে যাওয়া অ্যালেক্স আবারো  নিরাপদ জীবন যাপনে আবার অভ্যস্ত হয়ে উঠল।
সূত্র: কালের কণ্ঠ

সর্বশেষ - আন্তর্জাতিক