রাসিক নির্বাচন: আ.লীগের দখলে মাঠ, বিএনপি এখনো সিদ্ধান্তহীন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে ৩০ জুলাই। এরই প্রার্থীরা শুরু করেছেন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে। প্রায় ছয় মাস ধরে মাঠে আছে আওয়ামী লীগ। পক্ষান্তরে এখনো সেইভাবে মাঠেই নামতে পারেনি বিএনপি।  তার আগেই মাঠে দাপট দেখিয়ে চলেছে ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি নেতাকর্মীরা ঝিমিয়ে আছে। দলের নেতারা বলছেন, কেন্দ্র থেকে এখনো তাঁরা সিদ্ধান্ত পাননি। সিদ্ধান্ত দেওয়া হলে সেই অনুযায়ী কাজ করবেন তাঁরা। অবশ্য নির্বাচন ও আন্দোলন—দুটোর জন্যই তাঁদের প্রস্তুতি আছে বলে দাবি করছেন দলের নেতারা।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নগরজুড়ে হাজার হাজার ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড টানানো হয়েছে। মাঝে দুই দিন বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল একাই প্রচারে নেমেছিলেন। কিন্তু কয়েক দিন ধরে আর তাঁকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। বুলবুলের ব্যানার-ফেস্টুনও চোখে পড়ছে খুব কম। তাঁর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, তাঁর ব্যানার, ফেস্টুন লাগানো হলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সরিয়ে ফেলেছে।

নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা আকবর আলী বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এবার একক নির্বাচনই হচ্ছে। একটি দলেরই ব্যানার, ফেস্টুন চোখে পড়ছে বেশি। আবার তাদেরই প্রচার-প্রচারণা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো তৎপরতা নজরে আসছে না।’

অবশ্য রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রকি কুমার ঘোষ বলেন, ‘বর্তমান মেয়র বুলবুলের ব্যানার, ফেস্টুন নগরবাসীই দেখতে চায় না। তাই হয়তো কেউ সরিয়ে ফেলছে। রাজনীতির মাঠে তাঁর অবস্থান নেই বলেই তিনি এখন নিজের ব্যানার, ফেস্টুনও টানাতে পারছেন না। নগর ভবনকে দেউলিয়া করে নিজেও রাজনৈতিক অঙ্গনে দেউলিয়া হয়ে গেছেন।’

রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘অপপ্রচারের কারণে রাজশাহীর মানুষ গতবার ভুল করেছে। এবার সেই ভুল যেন না হয়, সে কারণে আমরা আগে থেকেই সাবেক মেয়র লিটনের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে মাঠে নামি। আগামীতে তিনি মেয়র হলে রাজশাহীবাসী কী কী উপকার পাবে, কী কী উন্নয়ন হবে, সেটিও তুলে ধরছি। গত পাঁচ বছরে রাজশাহী নগরবাসী কী কী উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছে, সেটিও আমরা তুলে ধরছি। যেন এবার আর নগরবাসী ভুল না করে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নির্বাচনী প্রস্তুতি অনেক আগে থেকেই নিয়ে রেখেছি। এখন কেবল চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করছি।’

নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে আমি গত ছয় মাস থেকেই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি। উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে মহল্লা কমিটিও করা হয়েছে নির্বাচন উপলক্ষে। নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে ওয়ার্ড পর্যায়ে এখনো নানা কর্মসূচি চলছে। আশা করি জনগণ এবার আর ভুল করবে না। রাজশাহীর উন্নয়নের কথা বিবেচনা করে জনগণ আমাকেই এবার মেয়র নির্বাচিত করবে।’

এদিকে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলের নগর শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো হয়নি। ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সভাপতি ও শফিকুল হক মিলনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১২ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয় দলের কেন্দ্র থেকে। ওই কমিটি ঘোষণার পর নগর বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর, তালা দেওয়াসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ফলে কয়েক দিনের মাথায় শুধু সভাপতি-সম্পাদককে রেখে বাকি পদগুলো স্থগিত করা হয়। এরপর প্রায় দেড় বছর ধরে শুধু সভাপতি-সম্পাদক দিয়েই চলছে নগর বিএনপি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী মহানগর বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘নির্বাচনের কোনো সিদ্ধান্তই এখনো আসেনি। অথচ প্রতিপক্ষ মাঠ দখল করে বসে আছে। এই অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নিলেও আমরা কী করব? এত কম সময়ের মধ্যে কি মাঠ গোছানো যাবে?’

নগর বিএনপির আরেক নেতা বলেন, ‘দলের নেতাকর্মীরা মাঠে নামবে কিভাবে, কারো তো পদই নেই। জনগণের কাছে তারা নিজেদের কী পরিচয় তুল ধরবে? ফলে নেতাকর্মীরা মাঠে নামছে না অনেকটা ক্ষোভ থেকেই। তার পরও দলীয়ভাবে এখন পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। এই অবস্থায় নেতাকর্মীরা মাঠেও নামতে পারছে না। ফলে ঝিমিয়ে পড়ছে দলের কর্মী-সমর্থকরাও।’

নগর বিএনপির সভাপতি ও বর্তমান মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘খুলনায় যেভাবে ভোট ডাকাতি হলো, তা হলে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আমাদের লাভ কী? কাজেই আগামী সিটি নির্বাচনে আমরা অংশ নিব কি না—তাও নিশ্চিত নয়। তার পরও কেন্দ্র থেকে যে সিদ্ধান্ত দিবে—সে অনুযায়ী আমরা প্রস্তুতি নিব।’

দলে কোন্দল বিষয়ে মেয়র বুলবুল বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো কোন্দল নেই। আমাদের তো মাঠে নামতেই দেওয়া হচ্ছে না। আমার ব্যানার, পোস্টারগুলোও ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রচার-প্রচারণা চালাতে গেলেও পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে—তাহলে আমরা কিভাবে নির্বাচনে অংশ নিব?’

স/আর