ঢাকায় নারীরা কেমন আছেন?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ঢাকায় নারীরা কেমন আছেন? যৌন সহিংসতা, স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি, নারীদের প্রতি সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা- এ চার মানদণ্ডে ঢাকার নারীরা কতটা নিরাপদ?

আন্তর্জাতিক সংস্থা থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের এক জরিপ মতে, এই চার মানদণ্ডে ঢাকার অবস্থান গড়ে ভালোও না, আবার খুব খারাপও না।

জরিপ অনুযায়ী, নারীদের জন্য ভয়ংকর শহরের তালিকায় বিশ্বের ১৯টি মেগাসিটির মধ্যে ঢাকার অবস্থান সপ্তম। ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের এই শহরে নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা ও হয়রানির চেহারা খুব খারাপ। নারীদের জন্য এই শহরের সংস্কৃতি আরো খারাপ। তবে স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থা বেশ ভালো।

বিশ্বজুড়ে ১ কোটির বেশি জনসংখ্যার ১৯টি মেগাসিটিতে জুন-জুলাই মাসে জরিপ চালিয়েছে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন। মোটা দাগে চারটি বিষয় আমলে নিয়ে নারীদের জন্য ভয়ংকর শহরের তালিকা করেছে সংস্থাটি।

যৌন সহিংসতা : ধর্ষণ অথবা যৌন হামলা ও হয়রানিসহ যৌন সহিংসতার ঝুঁকির মুখে না পড়ে এই শহরে নারীরা বসবাস করতে পারে কিনা- এ প্রশ্নের উত্তরে খুব বাজে অবস্থা সামনে এসেছে। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, বিশ্বের ১৯টি মেগাসিটির মধ্যে ঢাকার অবস্থান মেক্সিকো সিটির সঙ্গে যৌথভাবে চতুর্থ। যৌন সহিংসতার দিক থেকে সবার শীর্ষে আছে ভারতের দিল্লি, যে শহরটি আগে থেকেই ‘ধর্ষণের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সাও পাউলো, তারপর কায়রো।

স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি : স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার দিক থেকে ঢাকার নারীরা বেশ ভালো অবস্থানে আছে। সন্তান জন্মদান ও মাতৃত্বকালীন মৃত্যু ঝুঁকি এড়ানোসহ চিকিৎসাসেবা পাওয়ার সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে জরিপে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে মেগাসিটিগুলোর মধ্যে ঢাকার স্থান ১২তম। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বাজে অবস্থায় আছে লিমা। তারপর কিনশাসা, করাচি ও কায়রো।

নারীদের জন্য ঢাকার সংস্কৃতি : ক্ষতিকর সংস্কৃতি বা কুসংস্কারের হাত থেকে নারীরা সুরক্ষিত কিনা- নারীদের যৌনাঙ্গ নষ্ট, মেয়েদের অল্প বয়সে বা জোরপূর্বক বিয়ে দেওয়া ও কন্যাশিশুদের হত্যা করা হয় কিনা- এ প্রসঙ্গে জরিপে যে চিত্র উঠে এসেছে, তা খুবই ভয়াবহ। এ বিষয়ে ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। কায়রো আছে সবার ওপরে, তারপর করাচি।

অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা : যৌন সহিংসতা বা কুসংস্কারের দিক থেকে ঢাকার নারীরা ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে থাকলেও একটি বিষয়ে আশাবাদী হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা গ্রহণ, ভূমি বা অন্যান্য সম্পত্তিতে নারীদের মালিকানা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা আর্থিক পরিষেবা প্রাপ্তির দিক থেকে ঢাকার নারীদের অবস্থান বিশ্বের অন্য মেগাসিটিগুলো মধ্যে বেশ ভালো। এ বিষয়ে ১২তম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা।

‘নারীদের জন্য বিশ্বের ভয়ংকর শহরগুলো ২০১৭’ শীর্ষক জরিপ চালায় থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন।  বিশ্বে এটিই এ ধরনের প্রথম জরিপ। সামগ্রিক বিচারে নারীদের জন্য সবচেয়ে বেশি নিরাপদ শহর লন্ডন। তারপর আছে টোকিও, প্যারিস ও মস্কো।

ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ শহরের বাসিন্দা হবে, যেখানে বর্তমানে আছে ৫৪ শতাংশ। ১ কোটির বেশি জনসংখ্যা আছে- এমন শহরের সংখ্যা ১৯৯০ সালের তুলনায় তিন গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১টিতে। জাতিসংঘের ভাষ্যমতে, ২০৩০ সাল নাগাদ এ সংখ্যা দাঁড়াবে ৪১টিতে। শহর-নগরে জীবনমানের উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনের সুযোগ থাকলেও দ্রুত বর্ধমান নগরায়নের পরিপ্রেক্ষিতে সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে না পারলে অনেক সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে। বিষয়টি মাথায় রেখে বড় বড় শহরে নারীদের কী পরিস্থিতি, তার সন্ধান করার চেষ্টা করা হয়েছে এই জরিপে।

 

 

 

সূত্র: রাইজিংবিডি