রাজশাহী থেকে ঝুঁকি নিয়ে বাসের ছাদে করে যাত্রীরা যাচ্ছেন ঢাকায়

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: রাজশাহী থেকে ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার টিকিট নিয়ে হাহাকার অবস্থা। ঈদের আগে ও পরে অনেকেই অগ্রিম টিকিট কিনে রেখেছিল। তবে যারা টিকিট সংগ্রহ করতে পারেনি, তারা পড়েছে চরম ভোগান্তিতে। আগামী ৩ তারিখ পর্যন্ত বাস কাউন্টারগুলোতে টিকিট নেই। ফলে ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ যাত্রীরা বাসের ছাদে চড়ে কর্মস্থলে ফেরার চেষ্টা করছে। এ জন্য জনপ্রতি ৩০০ টাকা করে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।

ঢাকায় এক গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করেন রাজশাহীর পবা উপজেলার বড়গাছী এলাকার মকবুল হোসেন। ঈদের ছুটি পেয়ে পরিবার নিয়ে নাড়ির টানে এসেছিলেন গ্রামে। কিন্তু ফেরার বেলায় গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কোনো টিকিট না পেয়ে অনেকটা বিমর্ষ হয়ে পড়েন তিনি।

মকবুল বলছিলেন, ‘আজই কাউন্টারে এলাম। দেখি কোথাও টিকিট নেই। যেখানেই যাচ্ছি, সেখান থেকেই বলছে টিকিট নেই। ’

রাজশাহীতে ঈদ করতে এসেছিলেন কাঁকনহাট পৌরসভার জনি ইসলাম। ঢাকায় একটি প্রাইভেট কম্পানিতে চাকরি পেয়েছেন তিনি। আজ শনিবারই তাঁর যোগদান। কিন্তু রাজশাহীর শিরোইল বাস কাউন্টারে এসে দেখেন কোনো টিকিট নেই। কয়েক দিন ধরেই এই টিকিটের পেছনে হন্যে হয়ে ঘুরছিলেন তিনি। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত তার দেখা পাননি। অগত্যা সকাল ১১টার দিকে লোকাল একটি বাসের ছাদে চড়ে ৩০০ টাকা দিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন জনি।

অনেক খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে লোকাল বাসের একটি টিকিট কিনেছেন পুলিশ সদস্য শামিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ডিউটি শনিবার থেকে শুরু, আজ না গেলে উপায় নেই। এই প্রথম লোকাল বাসে চেপে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। যেখানেই যাই ৩ তারিখের আগে কোনো টিকিট নেই বলে জানাচ্ছে। বাধ্য হয়ে এভাবেই যেতে হবে। ’

সরেজমিনে ঘুরে আরো দেখা যায়, নগরীর শিরোইল বাস কাউন্টারের সামনে অর্থাত্ রাজশাহী রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশে রাস্তার ওপর ২০ থেকে ২২টি লোকাল বাসের দীর্ঘ লাইন। একের পর একটি ছেড়ে যাচ্ছে ঢাকার উদ্দেশে। তবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েই এসব বাসের সবই ছাদের ওপরে তুলছে যাত্রী। বাড়তি লাভের আশায় বাসের ভেতরে ও ছাদে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ছাড়ছে এসব লোকাল বাস। এ ক্ষেত্রে যাত্রীরা পড়ছে চরম ঝুঁকির মুখে। সঙ্গে তীব্র রোদ মাথায় নিয়ে চলতে হচ্ছে তাদের দূরের পথে। আবার ভেতরেও ঠাসাঠাসি করে যাত্রী তোলায় সেখানেও গরমে সিদ্ধ হতে হচ্ছে যাত্রীদের।

জানতে চাইলে হাসনা হেনা পরিবহন নামের একটি বাসের শ্রমিক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘ছাদের ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ’

এদিকে টিকিট কালোবাজারির অভিযোগ তো আছেই। নিজের নামে টিকিট সংগ্রহ করে পরিবহনের সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা সেগুলো বিক্রি করছে কালোবাজারে। সব কালোবাজারির টিকিটই বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণ দামে।

তবে ট্রেনের টিকিট নিয়ে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন রাজশাহী রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মো. জাহিদ হাসান। তিনি জানান, টিকিট না পেলে যাত্রীরা নানা অভিযোগ করবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। এবার টিকিট খুব স্বচ্ছতার ভিত্তিতেই বিক্রি হচ্ছে। সূত্র: কালের কণ্ঠ