নেট-দুনিয়ায় পরকীয়াকে ‘চিটিং’ বলে আর দূরে ঠেলে রাখা যায় কি!

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: বছর বত্রিশের মৌসুমী সাহা (নাম পরিবর্তিত) গত বছর তার স্বামীর সঙ্গে ইংল্যান্ডে পা রেখেছে। ভিসা সংক্রান্ত জটিলতায় তাকে তার ঝকঝকে চাকরিটা ছাড়তে হয়েছে এবং একেবারেই ঘরবন্দি হয়ে পড়তে হয়েছে। ঘরে সারাদিনের একঘেয়েমিতে তার দম বন্ধ হয়ে আসছে, উপায়ান্তর না দেখে শেষমেশ হাতে টেনে নিতে হয়েছে কি-বোর্ড, চোখ রাখতে হয়েছে কম্পিউটার স্ক্রিনে অথবা স্মার্ট ফোনের হোয়াটসঅ্যাপে। ক্রমে এটাই অভ্যাসে পরিণত। আরও পরে ব্যাপারটা অবসেশনের পর্যায়ে। নেট ঘেঁটে সারাদিন ‘বন্ধু’ জোগাড়, যার মধ্যে তার প্রাক্তন বয়ফ্রেন্ড থেকে শুরু করে অপরিচিত পুরুষও রয়েছে, তার পরে তাদের সঙ্গে হালকা ফ্লার্টিং আর জোকস বিনিময়। ধাপে ধাপে উঠতে উঠতে পর্ন শেয়ার। মৌসুমীর স্বামী অভিষেক কিন্তু বউকে অন্ধ ভাবেই বিশ্বাস করে এসেছে। বউয়ের ব্যাক্তিগত জীবনে নাক গলানোর লোক সে নয়। কিন্তু একদিন হঠাৎই তার চোখে পড়ে যায়, মৌসুমীর মোবাইলে ২০০-রও বেশি ‘আনরেড’ মেসেজ দপ দপ করছে। মৌসুমী তখন স্নানঘরে। অভিষেকের কৌতূহল হয়, কীসের এত মেসেজ! কারা পাঠায়! কিন্তু সহজাত ভদ্রতাবোধে আটকায় সেই মেসেজ বক্স খুলে দেখা। তা ছাড়া যে কোনও মুহূর্তে মৌসুমী বেরিয়েও আসতে পারে। তার উপরে অভিষেকের কাজের তাড়াও রয়েছে। সন্ধে আর উইকএন্ড ছাড়া বউয়ের সঙ্গে কাটানোর সময় কোথায়!

এই গল্প আজ ঘরে ঘরে। এমনটাই হয়ে থাকে ‘অনলাইন ইনফিডেলিটি’ বা সাদা বাংলায় ‘নেট-বিশ্বাসঘাতকতা’-র কেসগুলো। যারা এই ঘোটালায় পড়ে, তারা কিছুতেই একে ‘বিশ্বাসঘাকতা’ বলে মানতে চায় না। কারণ, এতে তো কোনও শরীরী লিপ্তি নেই! এই ‘অশরীরী’ নৈতিক অবস্থান কিন্তু তলায় তলায় জটিলতাকে যে বাড়িয়ে চলেছে, সেটা এরা টেরই পায় না।

পরকীয়া যে অপরাধবোধ এমনিতে তৈরি করে, অনলাইন ফ্লার্ট বা পর্ন শেয়ারিং-এ তা থাকে না সাধারণত। এর বাইরে গ্লানিবোধ না করার আর একটা কারণ হল, অনলাইন অ্যাফেয়ারকে সহজেই লুকিয়ে রাখা যায়। জনসমক্ষে ধরা পড়ার ভয় এতে নেই। লুকিয়ে দেখা করার জন্যে ‘কুঞ্জবন’ খোঁজার চাপ এতে নেই। অরক্ষিত যৌনতার ফলে কেলেঙ্কারির ভয়ও এতে নেই।

তাই বলে এই অনলাইন মধুকরবৃত্তিকে মোটেই নিরীহ বলে ভাববেন না। পুরনো প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ রাখাটা স্বাভাবিক। কিন্তু ইন্টারনেট এই সংযোগের সঙ্গে কোথাও একটা না-মেটা বাসনাকে যেন খুঁচিয়ে তোলে। ধিকিধিকি জ্বলতে থাকা সেই আঁচ নিজের অজান্তেই কখন লেলিহান আগুনে পরিণতি পায়। ততক্ষণে খেলা হাতের বাইরে চলে গিয়েছে। মৌসুমী একে ‘বিশ্বাসভঙ্গ’ বলে দেখে না। কিন্তু অভিষেকের কাছে এই সব তাদের বিয়েকে, তাদের দাম্পত্যকে তলা থেকে ক্ষইয়ে দিচ্ছে।

হাল আমলে কাকে ‘চিটিং’ বলবো, তা নিয়েই বিতর্ক উঠতে পারে। সম্প্রতি ডেজার্ট নিউজ নামে এক মার্কিন সংবাদমাধ্যমের করা সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সেদেশের তিনচতুর্থাংশ মানুষ মনে করেন, দাম্পত্য সম্পর্কের বাইরে কারোর সঙ্গে শরীরী ঘনিষ্ঠতা না হলে তাকে ‘চিটিং’ বলা যায় না। অন্য সব ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কেও সোজা-সাপটা ধারণা পাওয়া দুরূহ। যেমন, ‘সেক্সটিং’ ব্যাপারটাকে অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাসভঙ্গ হিসেবে দেখেন না। তা হলে ডিজিটাল যুগে এই ভার্চুয়াল পরকীয়াকে নৈতিকতার কোন কোপে ফেলব, তা নিয়ে একটা ধন্ধ থেকে যায়। ধন্ধ থেকে যায় ‘আমারই বধুঁয়া আনবাড়ি যায়’-এর সাম্প্রতিক সংজ্ঞা নিয়ে। সূত্র: এবেলা