বাজেয়াপ্তই আপন জুয়েলার্সের সোনার শেষ পরিণতি

সিল্কসিটিনিউজকে ডেস্ক: আপন জুয়েলার্সের জব্দ করা ১৫ দশমিক ১৩ মণ সোনার শেষ গন্তব্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট। পাঁচটি শোরুম থেকে জব্দ করা এসব সোনা রবিবার (৪ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে। এর আনুমানিক মূল্য ২৭৪ কোটি টাকা। শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতেই শুল্ক গোয়েন্দারা এসব সোনা জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা দিয়েছেন।’
মইনুল খান বলেন, ‘সাময়িকভাবে আটক করা সোনা ও হীরার অলঙ্কার মজুদের বিষয়ে আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দফা সুযোগ ও সময় দেওয়া হয়। তারা দুই দফায় উপস্থিত হয়েছেন। সর্বশেষ গত ৩০ মে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরে উপস্থিত হয়ে তারা বিমানবন্দর দিয়ে যাত্রীর মাধ্যমে আনা ১২৫ কেজি সোনার বিষয়ে ব্যাগেজ রশিদের ফটোকপি জমা দেন। কিন্তু এগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সবই ফটোকপি।

যাত্রীদের কাছ থেকে ক্রয় সংক্রান্ত কোনও রশিদ দেখাতে পারেননি। আটক করা সোনার অসংলগ্ন তথ্য উপস্থাপন করেছেন তারা। যেসব যাত্রীর কাছ থেকে সোনা কেনার কথা আপন জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ বলেছে, সেসব যাত্রীর ১৯ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। যারা ছয় মাসে এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে ১৮ বার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। প্রতি ভ্রমণে দুই পিস করে সোনার বার কিনেছেন তারা। কিন্তু কী কারণে তারা বিদেশ ভ্রমণ করেছেন বা বারবার এই ভ্রমণকারী অন্য কোনও চোরাচালানে জড়িত কিনা-সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

রবিবার (৪ জুন) রাতে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আপন জুয়েলার্সের পাঁচটি শোরুমে অভিযান চালিয়ে গত ১৪ ও ১৫ মে ৫৬৭ দশমিক ৫৪ কেজি বা ১৫ দশমিক ১৩ মণ সোনা ও ৪২৯ গ্রাম হীরা আটক করা হয়। সাময়িকভাবে আটক করা এসব সোনা ও হীরা মজুদের বিষয়ে আপন জুয়েলার্সের মালিক পক্ষের দেওয়া ব্যাখ্যা যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় এসব সোনা ও হীরা চোরাচালান পণ্য হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।

ফলে আপন জুয়েলার্সের ৫টি শোরুম থেকে ৫৬৭ দশমিক ৫৪ কেজি বা ১৫ দশমিক ১৩ মণ সাত হাজার ৩৬৯ পিস হীরার অলঙ্কার জব্দ করে নিয়মানুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করা হয়। গুলশান-১ এর ডিসিসি মার্কেটের শোরুমে ৫৬৭ দশমিক ৫৪ কেজি বা ১৫ দশমিক ১৩ মণ সোনা পাওয়া যায়। এছাড়াও পাঁচটি শোরুম থেকে ৬৭ লাখ ৪০ হাজার ৩১২ টাকা ও ১০০ মার্কিন ডলার জব্দ করা হয়েছে।
এদিকে, আপন জুয়েলার্সের অংশীদার ও প্রতিষ্ঠানটির মূল কর্ণধার দিলদার আহমেদ সেলিমের ভাই গুলজার আহমেদ বলেন, ‘শুধু কি আপন জুয়েলার্সের সোনাই অবৈধ? বাংলাদেশে সবাই একই পদ্ধতিতে ও একইভাবে সোনার ব্যবসা করেন। আজ আমরা যদি অপরাধী হয়ে থাকি, তাহলে অন্যরা নয় কেনো? এক্ষেত্রে শুধুমাত্র আপন জুয়েলার্সকে কেন টার্গেট করা হলো?’
আপনাদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সোনা ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাহলে আমিও অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অভিযান ও সোনা জব্দ করার বিষয়ে আইনি কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে আপন জুয়েলার্সের আইনজীবী আখতার ফরহাদ জামান বলেন, ‘আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ ও সময় এখনও হয়নি। সোনা জব্দ করে শুল্ক কর্তৃপক্ষ আমাদের জানাবে বা একটা নোটিশ দেওয়ার কথা। সেটা যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের না দেবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোনও আইনি পদক্ষেপ নিতে পারবো না। যখন জানাবে বা নোটিশ দেবে, তখন সেটা নিয়ে কী করা যায় চিন্তা-ভাবনা করা হবে।’

আপন জুয়েলার্স সঠিক কোনও কাগজপত্র দিতে পারেনি শুল্ক গোয়েন্দাদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট আখতার ফরহাদ জামান  বলেন, ‘আমরা ১২৫ কেজি সোনার কাগজ জমা দিয়েছি। উনারা যাচাই-বাছাই না করেই সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যমে বলে দিলেন-যে কাগজ দাখিল করা হয়েছে সেটার কোনও ভিত্তি নেই। বিষয়টি খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা সময়ের আবেদন করেছিলাম, চল্লিশ বছরের একটি প্রতিষ্ঠান। সব কাগজপত্র তো একসঙ্গে নেই। আমরা সবগুলো কাগজ যোগাড় করে নিয়ে আসতে হবে। সেগুলো গুছিয়ে তাদের দেবো। কিন্তু সেই সুযোগটাই তারা আমাদের দেননি।’
আপন জুয়েলার্সের শোরুমগুলোতে পরিচালিত অভিযানে নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তা শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের যুগ্ম পরিচালক সাফিউর রহমান বলেন, ‘কাস্টমস আইনের বাধ্যবাধকতার কারণেই তাদের দীর্ঘ সময় দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাছাড়া তাদের অনেক সুযোগ ও সময় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা ওই সময়ের মধ্যে যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন