জঙ্গিরা কেন পরিবারসহ আত্মঘাতি হচ্ছে?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: রাজশাহীর গোদাগাড়িতে একটি বাড়িকে ঘিরে জঙ্গি বিরোধী অভিযান আজ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করেছে পুলিশ। এ অভিযানের সময় গতকাল আত্নঘাতী বিস্ফোরণে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের পাঁচজন নিহত হয় এবং তাদের হামলায় ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মী মারা যায়।

সম্প্রতি বাংলাদেশে বিভিন্ন জঙ্গি-বিরোধী অভিযানের সময় জঙ্গিদের মধ্যে পরিবারের সদস্য নিয়ে আত্নঘাতী হবার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

গত দুই মাসে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গি-বিরোধী অভিযান চালানোর সময় আত্নঘাতী বিস্ফোরণে অন্তত ২৩জন নিহত হয়েছে। যদিও নিহতদের সবাই জঙ্গি নয়। সেখানে তাদের পরিবারের শিশু এবং অন্য সদস্যরাও আছে।

ঢাকায় বিমান বন্দরের সামনে, র‍্যাব অফিসের কম্পাউন্ডে, সীতাকুণ্ড, সিলেট এবং মৌলভীবাজার, ঝিনাইদহ এবং সর্বশেষ রাজশাহীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন সময় আটককৃত জঙ্গিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা বোঝার চেষ্টা করছেন কেন জঙ্গিরা আত্নঘাতী হচ্ছে। সে তথ্য বিশ্লেষণ করে তারা দুটো বিষয় ধারণা করছেন।

প্রথমত ধর্মের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে জঙ্গিরা উদ্বুদ্ধ হয়েছে। তারা মনে করছে যে এ ধরণের পরিস্থিতিতে আত্নঘাতী হলে তারা ‘বেহেশতে’ যেতে পারবে।

দ্বিতীয়ত অনেকেই মনে করে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের নেটওয়ার্ক সম্পর্কে তথ্য বের হয়ে যেতে পারে। সে ধরণের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্যও কেউ-কেউ আত্ন হননের পথ বেছে নিচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের গোপনীয় শাখার সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক মো: মনিরুজ্জামান বলছিলেন, মূলত ধর্মের অপব্যাখ্যার বা ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে অনেকে এ পথে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।

“তাদের মধ্যে একটি অপবিশ্বাসের জন্ম দেওয়া হয়েছে যে আক্রমণের কোন একটি পর্যায়ে যদি তারা নিহত হয়, এটা যদি আত্মহত্যাও হয়, তাহলেও তাদের জান্নাতটা নিশ্চিত। মূলত এ বিশ্বাসের কারণেই তারা নিজেদের পরিবারের নারী এবং শিশুদের নিয়ে নিহত হতেও তারা একটু কুন্ঠিত হয় না,” বলছিলেন মি: মনিরুজ্জামান।

অতীতে বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গি-বিরোধী অভিযানের সময় গোলাগুলিতে সন্দেহভাজন জঙ্গিরা মারা যাবার কথা বলা হলেও ইদানিংকালে জঙ্গিদের আত্নঘাতী হবার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মনিরুজ্জামান মনে করেন, এ ধরণের প্রবণতা একটি দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

মি: মনিরুজ্জামান বলেন, “সবসময় দেখা যায়, জঙ্গিবাদের ধরণাটা যে কোন দেশে আস্তে-আস্তে পরিবর্তন হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সে ধরণের একটা প্রবণতা আমরা দেখতে পাচ্ছি। আত্নঘাতী হামলাকারী যারা আছে তারা নিজেদের আস্তানায় মারা গেছে। এরা যদি আস্তানা থেকে বের হয়ে আত্নঘাতী হামলা করতে পারে, তাহলে বড় ধরণের একটা আশংকা আমরা দেখতে পাচ্ছি।”

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছর গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর পুরো জঙ্গি বিরোধী অভিযান ঢেলে সাজানো হয়েছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট গঠিত হবার পাশাপাশি পুলিশ সদরদপ্তরে একটি আলাদা গোয়েন্দা ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। যাদের কাজ জঙ্গি তৎপরতা সম্পর্কে নজরদারি করা।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক মো: মনিরুজ্জামান বলেন , গোয়েন্দা তথ্যের উপর ভিত্তি করে সুনির্দ্দিষ্টভাবে প্রতিটি জঙ্গি-বিরোধী অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি বলছেন, অনেক সময় জঙ্গিরা যখন পালানোর পথ পাচ্ছে না তখন কেউ-কেউ আত্নঘাতি হবার পথ বেছে নিচ্ছে।

মি: মনিরুজ্জামান বলেন, “তাদের ডেনগুলো (আস্তানা) খুঁজে-খুঁজে তারা নতুন করে কিছু করার আগেই আমরা তাদের আস্তানাগুলোতে হামলা করতে পেরেছি যাতে করে তারা তাদের থাবা মেলতে না পারে। এবং তাদের লুকানোর গর্তগুলো আমরা আইডেনটিফাই (চিহ্নিত) করেছি।”

গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর গত দশ মাসে ১০০’র বেশি সন্দেহভাজন জঙ্গিকে আটক করা হয়েছে এবং ৫০জনের বেশি জঙ্গি অভিযানের সময় মারা গেছে।

প্রতিটি অভিযানের সময় জঙ্গিদের আত্নসমর্পণের পথ খোলা রাখা হচ্ছে বলে পুলিশ বলছে। কিন্তু ইদানিংকালে জঙ্গিদের অনেকেই আত্নসমর্পণের চেয়ে আত্নহননকে শ্রেয় মনে করছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা