ভারতের উত্তর প্রদেশে ‘লাভ জিহাদ’এর বলি হলেন এক মুসলিম প্রৌঢ়

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: ভারতে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের বুলন্দশহরে একজন প্রৌঢ় মুসলিমকে পিটিয়ে মেরে ফেলার অভিযোগ উঠেছে হিন্দু যুবা বাহিনীর বিরুদ্ধে।

এই সংগঠনটি রাজ্যের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের হাতে গড়া।

পুলিশ জানিয়েছে, ঐ এলাকায় এক মুসলিম যুবকের সঙ্গে এক হিন্দু মেয়ের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার জেরে মঙ্গলবার একদল লোক গুলাম আহমেদের ওপর চড়াও হয়।

কিন্তু তিনি যখন তাদের গতিবিধি সম্বন্ধে কিছু জানাতে পারেননি, তখন তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়।

হিন্দু যুবা বাহিনী অবশ্য এই হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।

ওদিকে নিহত গুলাম আহমেদের পরিবার ভয়ে এখন তাদের গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

উত্তরপ্রদেশ জুড়ে ইদানীং যে হিন্দু যুবা বাহিনীর একচ্ছত্র দাপট, তাতে তাদের প্রধান দুটি এজেন্ডা হল গোহত্যা আর ‘লাভ জিহাদ’ প্রতিহত করা। অর্থাৎ ঐ রাজ্যে তারা যেমন গরু-মোষের চালান রুখছে, তেমনি ঝাঁপিয়ে পড়ছে হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে প্রেমের ঘটনা ঠেকাতেও।

হিন্দুত্বের নামে কোনও বাড়াবাড়ি সহ্য করা হবে না বলে বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা, মুখ্যমন্ত্রী অদিত্যনাথ তাদের প্রকাশ্যে সতর্ক করে দিলেও হিন্দু যুবা বাহিনী তাতে কর্ণপাত করছে বলে মনে হয় না।

আর সেটাই আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেছে বুলন্দশহর জেলার পাহাসু গ্রামে।

সেখানে তথাকথিত লাভ জিহাদের একটি ঘটনার অনুসন্ধানে এসে তারা চড়াও হয়েছিল স্থানীয় বাসিন্দা গুলাম আহমেদের ওপর।

স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা এন সিং বিবিসিকে বলছিলেন, “ঐ মুসলিম যুবক ও হিন্দু যুবতীর পালিয়ে যাওয়ার সঙ্গে এই হামলার কিছুটা সম্পর্ক তো ছিলই। তবে মেরে ফেলার ঘটনাটা হঠাৎই ঘটে গেছে। গুলাম আহমেদকে হত্যা করার কোনও পরিকল্পনা ওদের ছিল না।”

“উনি কিছুটা অসুস্থও ছিলেন সম্ভবত, আঘাতের ধাক্কাটা সামলাতে পারেননি। মোট পাঁচ-ছজন হামলাকারী ছিল। তিনজনকে আমরা ধরেও ফেলেছি, বাকিরা ফেরার। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ১৪৭, ১৪৮ আর ৩০২ ধারায় হত্যা মামলা আনা হয়েছে।”

হামলাকারীরা হিন্দু যুবা বাহিনীর সদস্য কি না, পুলিশ তা নিয়ে কিছু বলতে চায়নি, যদিও নিহতের পরিবারের সদস্যরা আঙুল তুলেছেন বাহিনীর দিকেই।

বাহিনীর নাম না-জানা ছ’জন সদস্যের বিরুদ্ধেই তারা এফআইআর করেছেন।

তবে বুলন্দশহরে হিন্দু যুবা বাহিনীর বিভাগীয় প্রধান নগেন্দ্র তোমার দাবি করেছেন, তাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ সদস্যরা এমন হিংসায় জড়াতেই পারেন না।

তবে যদি দেখা যায় তাদের কেউ জড়িত তাহলে বাহিনী তাদের সঙ্গে সঙ্গে বহিষ্কার করবে।

স্থানীয় একজন উর্দু টিভি সাংবাদিকের প্ররোচনাতেই নিহতের পরিবার বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে বলেও তিনি দাবি করেন।

আর এই দাবি ও পাল্টা দাবির মধ্যেই গুলাম আহমেদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

গুলাম আহমেদের স্ত্রী কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “লোকটা আমায় কিছু না-বলে চলে গেল! বলেছিল চা বসাও তো একটু, দুধ না-থাকলে আমি দুধ নিয়ে আসছি। কিন্তু লোকটা আর ফিরলই না, আমায় এভাবে একলা ফেলে কীভাবে চলে গেল …”

নিহতের বাড়ির সামনে এখন বসেছে ২৪ ঘণ্টার পুলিশ পাহারা।

কিন্তু গুলাম আহমেদের পরিবার তাতে আদৌ আশঙ্কামুক্ত হতে পারছে না, বরং তারা প্রথম সুযোগেই ভিটে ছেড়ে শহরে পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন।

গুলাম আহমেদের বড় ছেলে ইয়াসিন বিবিসিকে বলছিলেন, “এই পুলিশ পাহারা আর কতদিন? দু’চারদিন বাদে এরা চলে গেলেই তো নির্ঘাত আবার হামলা হবে। আমরা খুব ভয় পেয়ে গেছি, জানের ভয়। তাই ঠিক করেছি যেখানে পারব চলে যাব – শহরে একটা ঝুপড়ি বানিয়ে থাকব। দরকারে ফুটপাথেই শোবো। প্রাণ তো সবারই প্রিয়, তাই না?”

যুবক-যুবতীর যে পালিয়ে ঘটনার সূত্র ধরে তার বাবাকে মেরে ফেলা হল, গুলাম আহমেদ তার বিন্দুবিসর্গ জানতেন না বলেও দাবি করেছেন ইয়াসিন।

তিনি বলছেন, “শুধু মুসলিম বলেই তার ওপর হামলা হয়েছিল। উনি একজন ভোলাভালা বৃদ্ধ মানুষ, উনি কী জানবেন বলুন তো?”

এলাকার মুসলিম পরিবারগুলো বলছে, পালিয়ে যাওয়া ঐ যুবক-যুবতীকে খোঁজার চেষ্টা করেছিল তারাও, কিন্তু কোনও সন্ধান মেলেনি।

কিন্তু এখন গুলাম আহমেদের মৃত্যু ও হিন্দু যুবা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর এলাকায় সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাও ছড়িয়ে পড়েছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা